প্রতীকী ছবি।
সত্যের অনুসন্ধান করে আসল খবর গোটা দুনিয়ার সামনে তুলে ধরাই তাঁদের কাজ। অথচ সেই কাজের সূত্রে তাঁরা খুন হয়ে গেলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অধরা থেকে যায় হত্যাকারী বা চক্রান্তকারীরা। সমাধান হয় না তাঁদের খুনের রহস্যের। সাংবাদিকদের হত্যা নিয়ে এমনই পরিসংখ্যান প্রকাশ করল ‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) নামে একটি আমেরিকান সংগঠন। পরিসংখ্যানে গত দশ বছরের হিসাব দেখিয়ে সংগঠনটির দাবি, গোটা বিশ্বে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের হত্যা মামলার সমাধান করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশ। খুনিরা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এখনও।
২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩১ অগস্ট। মূলত এই দশ বছরের পরিসংখ্যানই নিজেদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে তুলে ধরেছে সিপিজে। সাংবাদিক হত্যা ও সমাধান না হওয়া মামলার তালিকায় রয়েছে ১২টি দেশের নাম। যার শীর্ষে রয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, ইরাক এবং দক্ষিণ সুদান। বারো নম্বর স্থানে রয়েছে ভারত। ভারতের দুই পড়শি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের নম্বর যথাক্রমে ৯ ও ১১।
সংগঠনটির ব্যাখ্যা, যে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, দারিদ্র যত বেশি, সে দেশে তত বেশি সাংবাদিক খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে খুন হন। দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির জন্যই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমাধান হয় না সাংবাদিকদের খুনের মামলার।
সিপিজে-র পরিসংখ্যান বলছে, শুধু মাত্র ২০২০ সালেই গোটা বিশ্বে ২২ জন সাংবাদিক নিজেদের পেশাগত কারণে খুন হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় যে সংখ্যাটা দ্বিগুণ। তবে চলতি বছরে মল্টা ও স্লোভাকিয়ার দুই সাংবাদিক হত্যায় জড়িতরা শাস্তি পাওয়ায় ওই দুই দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রশংসা করা হয়েছে রিপোর্টে। একই ভাবে বাংলাদেশের মুক্তমনা ব্লগার অভিজিৎ রায় ও প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনের নৃশংস হত্যার ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের সদস্যদের মৃত্যুদণ্ডের কথাও রিপোর্টে উল্লেখ
করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে বিশ্বের যে দেশের সাংবাদিকদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়, সেই আফগানিস্তান তালিকায় রয়েছে ৫ নম্বরে। সিপিজে-র তরফে জানানো হয়েছে, যে সময়ের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট বানানো হয়েছে, তা আফগানিস্তানে তালিবান শাসনের পূর্ববর্তী অধ্যায়। ফলে ক্ষমতা দখলের পরে তালিবান নেতৃত্ব আফগান সংবাদমাধ্যমের উপরে যে ধরনের বিধিনিষেধ চাপিয়েছেন, তা রিপোর্টে উল্লেখ করা সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি তালিবানের অত্যাচারে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারানো সাংবাদিকদের নাম প্রকাশও। গনি সরকারের পতনের পর পরই তালিবানি অত্যাচারের ভয়ে প্রচুর সাংবাদিক আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। মহিলা সাংবাদিকেরা তো কাজ ছেড়ে এখন কার্যত ঘরে বন্দি। তা ছাড়া প্রতিনিয়ত তালিবানের হুমকির মুখেই কাজ করতে হচ্ছে আফগান সংবাদমাধ্যমকে। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, তালিবান পরবর্তী যুগের পরিসংখ্যান সিপিজে-র এই রিপোর্টে যোগ হলে তালিকার শীর্ষে হয়তো থাকত আফগানিস্তানেরই নাম।
সংবাদ সংস্থা