রোমান প্রোটাশেভিচ
সরকারের কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিনি। যাচ্ছিলেন গ্রিসের অ্যাথেন্স থেকে লিথুয়েনিয়ার ভিলিনিয়াসে। কিন্তু মাঝপথে সেই বিমানকে জরুরি অবতরণ করায় বেলারুশ সরকার। রাজধানী মিনস্কের বিমানবন্দরেই গ্রেফতার করা হয় রোমান প্রোটাশেভিচকে। ২৬ বছরের এই সাংবাদিককে এ ভাবে গ্রেফতার করায় বিশ্ব জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কাঠগড়ায় প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কোর সরকার। যুদ্ধবিমান দিয়ে যাত্রিবাহী ওই বিমানকে এ ভাবে জরুরি অবতরণ করানোয় বেলারুশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উড়ান সংক্রান্ত কঠোর আইন আনার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
কী হয়েছিল গত কাল? আইরিশ উড়ান সংস্থা রায়ান এয়ারের তরফে জানানো হয়েছে, ভিলিনিয়াসগামী তাদের ওই বিমান এফআর-৪৯৭৮ বেলারুশের আকাশে প্রবেশ করার পরেই একটি মিগ বিমান সেটির পথ আটকায়। পাইলটকে বলা হয়, বিমানটিকে যেন মিনস্ক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করানো হয়। বিমান বেলারুশের মাটি ছুঁলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় ওই সাংবাদিককে। বিমানবন্দরে তখন কেজিবি-র আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন বলেও জানিয়েছে উড়ান সংস্থা।
বেলারুশ সরকার অবশ্য এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের কাছে খবর ছিল যে ওই বিমানে বোমা রাখা আছে। তল্লাশির জন্যই বিমানটিকে নামানো হয়। কিন্তু লুকাশেঙ্কো সরকারের এই বক্তব্যকে আদৌ আমল দিতে চান না বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, রোমান ওই বিমানে আছেন জানার পরেই যে কোনও উপায়ে তাঁকে গ্রেফতার করতে এই কৌশল নিয়েছে বেলারুশ সরকার। রোমান ও আর এক বিরোধী ব্লগারকে আগেই সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে রেখেছে বেলারুশ সরকার।
দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট ভাষায় সরকার-বিরোধী লেখা লিখে আসছেন রোমান। দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে এখন পোলান্ডে থাকেন তিনি। ভিলিনিয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর সঙ্গে ছুটি কাটাতে গ্রিসে গিয়েছিলেন তিনি। রোমানের সঙ্গে আটক করা হয়েছে ২৩ বছরের সেই ছাত্রী সোফিয়া সাপেগাকেও।
রোমানের সহযাত্রীরা জানিয়েছেন, বিমানটি মিনস্কে অবতরণের কথা শুনেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন রোমান। বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর সঙ্গে ঠিক কী হতে চলেছে। এডভিনাস ডিমসা নামে এক যাত্রী বললেন, ‘‘রোমান চিৎকার চেঁচামেচি করেননি। কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, অসম্ভব ভয় পেয়েছেন। বিমানের জানলা খোলা থাকলে উনি হয়তো আকাশ থেকেই ঝাঁপ দিতেন।’’ আর এক যাত্রী জানালেন, রোমান তাঁদের বলেছেন যে, বেলারুশ সরকার তাঁকে ধরতে পারলে মৃত্যুদণ্ড দেবে।
রোমানকে এ ভাবে গ্রেফতার করায় লুকাশেঙ্কো সরকারের বিরুদ্ধে সরব ইউরোপের অধিকাংশ দেশ। আমেরিকার বিদেশসচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও গোটা ঘটনার নিন্দা করে অবিলম্বে রোমানের মুক্তি চেয়েছেন। ফ্রান্স থেকে শুরু করে আয়ারল্যান্ড, গ্রিস থেকে লিথুয়েনিয়া। প্রতিটি দেশের শীর্ষ নেতারাই লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। পোলান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাতেয়ুজ় মোরাউইয়েকি বলেছেন, ‘‘বেলারুশ সরকার যেটা করল সেটা সরকার সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ ছাড়া আর কিছুই না।’’ সুইডেনের বিদেশমন্ত্রী অ্যান লিন্ডের কথায়, ‘‘এটা পুরোপুরি ভাবে ইইউ-র নিয়মের পরিপন্থী।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংগঠনও জানিয়েছে, গত কাল বেলারুশ যা করেছে তা শিকাগো সম্মেলনে করা চুক্তির পরিপন্থী। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কিছু সদস্য দেশ ইতিমধ্যেই বেলারুশের আকাশকে আন্তর্জাতিক ভাবে বয়কটের ডাক দিয়েছে। ফ্রান্স বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের দ্বারস্থ হয়েছে।