জো বাইডেন।
বিদায়ী প্রেসিডেন্ট নিজের পরাজয় স্বীকার করছেন না, ভোটে কারচুপির দাবিতে তিনি এখনও অনড়। অন্য দিকে, অ্যারিজ়োনার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ চলে এল ভাবী প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর বাইডেন জুনিয়রের দখলে। একই সঙ্গে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গণনার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা গত কালই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ভোটে কারচুপির কোনও প্রমাণ তাঁরা পাননি। প্রতিটি প্রদেশের প্রতিটি ভোটারের তথ্য তাঁদের কাছে রয়েছে। ভোট মুছে দেওয়া বা প্রতিপক্ষ দলে ভোট পাঠানোর মতো অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন তাঁরা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অ্যারিজ়োনার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ্যে আসার ঠিক পরের দিনই, বাইডেন ও তাঁর সহকারী কমলা হ্যারিসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে চিন।
রিপাবলিকানদের অন্যতম শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত অ্যারিজ়োনা গত সাত দশকে মাত্র দু’বার ডেমোক্র্যাটদের দখলে গিয়েছে। বিল ক্লিন্টনের পরে সেটি ফের জিতলেন বাইডেন। তবে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেনের ব্যবধান খুব বেশি নয়। এই প্রদেশের ১১টি ইলেক্টোরাল জেতার পরে বাইডেনের মোট আসন সংখ্যা ২৯০-এ পৌঁছেছে। জর্জিয়া প্রদেশে আগেই হাতে ভোট গণনা শুরু হয়েছিল। সব শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সেখানেও কমপক্ষে ১৪ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীর এই জয় এখনও মেনে নিতে নারাজ ট্রাম্প। তিনি ভোট পদ্ধতিতে কারচুপি ও ব্যাপক জালিয়াতির কথা বলেই যাচ্ছেন। যদিও নির্বাচনী আধিকারিকদের বক্তব্য, এই অভিযোগের সপক্ষে তথ্য প্রমাণই নেই ট্রাম্প শিবিরের কাছে।
আমেরিকান ভোট ও গণনা পদ্ধতির দিকে ট্রাম্প আঙুল তোলায় তাঁর প্রবল সমালোচনা করেছেন পূর্বসূরি বারাক ওবামা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য, এ ভাবে কারচুপির নালিশ করে ট্রাম্প শুধু তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বীরই নয়, গোটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
অন্য দিকে, গোটা বিশ্বের নজর যে ভোটের দিকে ছিল, সেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল নিয়ে গত কাল পর্যন্ত একটি শব্দও খরচ করেনি বেজিং। আজ চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এক বিবৃতিতে বাইডেন ও তাঁর সহকারী হ্যারিসকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘আমেরিকার মানুষের পছন্দকে চিন সম্মান করে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা আশা করব আমেরিকান আইন মেনেই এই ভোটের যাবতীয় ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।’’ চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের ইঙ্গিত ট্রাম্প শিবিরের তোলা অভিযোগের দিকে হলেও গোটা নির্বাচনের নিরাপত্তার দায়িত্ব সামলানো দু’টি কমিটি অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই ভোটের ফলাফলে কোনও অস্বচ্ছতা নেই। প্রয়োজনে কোনও প্রদেশের ফল পুনর্গণনা করতে হলে ভোটারদের যাবতীয় নথি গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষিত আছে বলেও জানিয়েছে তারা। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কালও টুইট করে অভিযোগ করেছেন, তাঁর পক্ষে যাওয়া কুড়ি লক্ষেরও বেশি ভোট ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।
ফল নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই ফের চর্চায় ট্রাম্পের প্রাক্তন প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিন্টনের নাম। রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার পরবর্তী দূত হিসেবে বাইডেন তাঁর নাম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছেন বলে জানা গিয়েছে।
আগামী জানুয়ারিতে কমলা ভাইস প্রেসিডেন্টের গদিতে বসলে তাঁর ক্যালিফর্নিয়ার সেনেটরের আসনটি খালি হবে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেন আর এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান কংগ্রেস সদস্য রো খন্না। খবর শুনে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই আসনের জন্য আমার নাম বিবেচনা করা হতে পারে শুনে আমি সম্মানিত। আমি ইতিমধ্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করি— সিলিকন ভ্যালি। দেখা যাক কী হয়। কোথায় আমি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাই।’’