ছবি: সংগৃহীত।
জেফ বেজোসের মালিকানাধীন সংবাদপত্রে সৌদি আরব-বিরোধী রিপোর্ট বন্ধের চেষ্টা করতেই সম্ভবত তাঁর মোবাইল ফোন হ্যাকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এবং তাতে জড়িত রয়েছেন স্বয়ং সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সলমন। সৌদি যুবারাজের সঙ্গে এক ডিনার-বৈঠকের পরই বেজোসের মোবাইল হ্যাক হয়েছিল। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে এমনটাই দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞদের। যদিও প্রথম থেকেই এ দাবিকে আজগুবি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সৌদির যুবরাজ।
অ্যামাজন-প্রতিষ্ঠাতা তথা ওই সংস্থার সিইও জেফ বেজোসের মোবাইল ফোন হ্যাক করা বা তাতে জড়িত থাকার অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও সৌদি আরবের যুবরাজের অস্বস্তি কমছে না। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞরা একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘যে সমস্ত তথ্য আমরা পেয়েছি তাতে বোঝা যাচ্ছে, মিস্টার বেজোসের উপর নজরদারিতে সম্ভবত জড়িত ছিলেন সৌদির যুবরাজ।’’ কিন্তু সৌদির যুবরাজ জেফ বেজোসের মতো এক মার্কিন নাগরিকের উপর নজরদারি করবেন কেন? বিবৃতিতে সে উত্তরও দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, ‘‘মার্কিন সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ সৌদি আরবের উপর লেখা রিপোর্ট বন্ধের জন্যই বা তা সম্ভব না হলে সেগুলি প্রভাবিত করতেই এমন চেষ্টা করা হয়েছে।’’
অ্যামাজনের সিইও বেজোসের মালিকানাধীন ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক রিপোর্ট লিখেছেন খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাশোগি। অভিযোগ উঠেছে, সে জন্যই সংবাদপত্রের মালিক বেজোসের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেয় সৌদি আরব। ২০১৮-র ১ মে একটি হোয়াট্সঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে বেজোসের মোবাইলে একটি ভিডিয়ো মেসেজ এসেছিল। তা খোলার পরই নাকি খোয়া যায় বেজোসের ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি। অভিযোগ, ওই হোয়াট্সঅ্যাপটি এসেছিল সৌদির যুবরাজের অ্যাকাউন্ট থেকে। বেজোসের ব্যক্তিগত তথ্য-ছবি দিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ উঠেছে একটি মার্কিন ট্যাবলয়েড ‘ন্যাশনাল এনকোয়ারার’-এর বিরুদ্ধেও। সৌদির যুবরাজের নির্দেশেই খাশোগিকে খুন করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে এই নতুন অভিযোগ।
আরও পড়ুন: বেজোসের ফোনে মেসেজের ফাঁদ সৌদির
আরও পড়ুন: এলআইসির এনপিএ দ্বিগুণ, নতুন উদ্বেগ
গোটা বিষয়টি সৌদি আরব উড়িয়ে দিলে জেফ বেজোস-কাণ্ডে তদন্তকারীরা তুলে ধরেছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ‘এফটিআই কনসাল্টিং’ নামে একট ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থায় প্রকাশিত রিপোর্টে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আমেরিকা সফরের সময় গত ২০১৮-র ৪ এপ্রিল সৌদির যুবরাজের সঙ্গে এক ডিনার-বৈঠক হয়েছিল বেজোসের। সে সময় মার্কিন লগ্নি টানতে নিজের দেশের প্রগতিশীল ভবিষ্যৎ তুলে ধরতে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তুলে ধরেন সৌদির যুবরাজ। অন্য দিকে, মধ্য প্রাচ্য বিশেষ করে সৌদিতে নিজের ব্যবসা বাড়ানোর কথাও চিন্তা-ভাবনা করছিলেন বেজোস। ওই বৈঠকেই নিজেদের মোবাইল নম্বর আদানপ্রদান করেছিলেন সৌদির যুবরাজ ও বেজোস। এর প্রায় চার সপ্তাহ পরে বেজোসের মোবাইলে ৪.২২ এমবি-র একটি ভি়ডিয়ো-সহ হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজ এসেছিল। অভিযোগ, সৌদির যুবরাজের অ্যাকাউন্ট থেকে আসা ওই ভিডিয়ো খোলার পর বেজোসের বহু ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি হ্যাকড হয়ে যায়। সে সময় স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছিল বেজোসের। তাঁর সঙ্গে এক নারীর বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়েও জলঘোলা চলছিল। সে সব অন্তরঙ্গ তথ্য ও ছবিই নাকি বেহাত হয়ে যায়। একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে ওই সমস্ত তথ্য ও ছবি ফাঁসের কথাও নাকি বেজোসকে বলেছিল ‘ন্যাশনাল এনকোয়ারার’।
আরও পড়ুন: এবার সব ক্যানসার সারবে একই উপায়ে? যুগান্তকারী আবিষ্কার
আরও পড়ুন: মুখে চ্যালেঞ্জ করলেও ‘বিজেপি বন্ধু’র ভূমিকায় মায়া
গোটা বিষয়টি নিয়ে এর পর পদক্ষেপ করেন বেজোস। সুরক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা গ্যাভিন ডি বেকারের নেতৃত্বে একটি দলকে দিয়ে তদন্ত শুরু করায় বেজোসের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী। ২০১৮-র নভেম্বরে সৌদির যুবরাদের অ্যাকাউন্ট থেকে আরও একটি মেসেজে পান বেজোস। তাতেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য ছিল বলে রিপোর্ট। তদন্তকারীরা এ-ও জানিয়েছেন, ওই ভিডিয়ো মেসেজটি পাওয়ার আগে বেজোসের মোবাইল থেকে বিগত ছ’মাসে প্রতি দিন ৪৩০ কেবি ডেটা বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। তবে ভিডিয়ো মেসেজটি খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ১২৬ এমবি ডেটা বার হয়ে যায় তাঁর মোবাইল থেকে। গত নভেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে গোটা তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় ‘এফটিআই কনসাল্টিং’। রাষ্ট্রপুঞ্জের তদন্তকারীদের মতে, অভিযোগগুলি অত্যন্ত সঙ্গীণ। এক মার্কিন নাগরিকের ফোনে এক বিদেশি সরকার ‘হানাদারি’র মতো বিষয়টি যে ফেডেরাল কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন বিষয় হওয়া উচিত, তা-ও মনে করেন এক বিশেষজ্ঞ।