shinzo abe

Japan: শান্ত শোকে বিমর্ষ জাপান, কাজ টোল খায় না তবুও!

এ দেশে থাকার সূত্রে জাপানি ভাষা খানিকটা তো বুঝতে পারি। তাই তাঁদের কথায় মন দিতেই কানে এল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজ়ো আবে গুলিবিদ্ধ!

Advertisement

সৈকত দাস

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২ ০৬:২৬
Share:

ফাইল চিত্র।

সূর্যোদয়ের দেশে ঘড়ির কাঁটা তখনও দুপুর ১২টা পেরোয়নি। আর পাঁচটা দিনের মতোই আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে কাজে ব্যস্ত। হঠাৎই খেয়াল করলাম, আমার জাপানি সহকর্মীরা চাপা গলায়, উৎকণ্ঠার সঙ্গে কী যেন একটা বিষয়ে আলোচনা করছে। এ দেশে থাকার সূত্রে জাপানি ভাষা খানিকটা তো বুঝতে পারি। তাই তাঁদের কথায় মন দিতেই কানে এল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজ়ো আবে গুলিবিদ্ধ!

Advertisement

চমকে গেলাম। আমি একা নই, আমার জাপানি সহকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীরাও। আমেরিকায় স্কুলে-শপিং মলে গুলি চলার ঘটনা এবং সেই সূত্রে মৃত্যুর খবর মাঝেমধ্যেই কানে আসে। ইউরোপেও ‘লোন উল্ফের’ আক্রমণ একেবারে অপরিচিত নয় কিন্তু তা বলে জাপানে! এখানকার গড়পড়তা মানুষ এত শান্ত, ভদ্র, নম্র, যে রাস্তায় কেউ কাউকে গুলি করে মেরে ফেলছে, এমনটা ভাবাই কষ্টকল্পনা। তা-ও কি না দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে! আমার এক ছাত্রই যেমন বলছিল, ‘‘আমেরিকায় এমন গুলি চলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু জাপানে এমনটা অবিশ্বাস্য।’’

কিন্তু ততক্ষণে ধীরে ধীরে আমরা সকলেই বুঝতে পারছি যে, ‘অবিশ্বাস্য’ ঘটনাই ঘটে গিয়েছে কিছুক্ষণ আগে। এখানকার স্থানীয় জাপানি নিউজ় পোর্টালগুলি সেই খবর জানাচ্ছে। সহকর্মীদের কথায় বুঝলাম, টোকিয়ো থেকে প্রায় ৪৮০ কিলোমিটার দূরে নারাতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছিলেন আবে। গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই লুটিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নারা মেডিক্যাল সেন্টারে। অবস্থা সঙ্কটজনক। বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় নেই।

Advertisement

সময় গড়াচ্ছে। কাজের ফাঁকে-ফাঁকে প্রায় সকলের চোখ খবরে। ঘটনার অভিঘাতে কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন অনেকে। এর মধ্যেই খবর এল, আবে প্রয়াত!

ঝুপ করে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এল চারদিকে। মুখচোখ থমথমে। কথা সরছে না প্রায় কারও মুখে। কিন্তু খানিকটা অবাক হয়েই দেখলাম,

এত কিছুর মধ্যেও বাকি সময়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ হল পুরোদস্তুর। যেমন চলছিল, প্রায় তেমনই চলল। শোক দেশকে গ্রাস করলেও, কাজের চাকা কোথাও কিন্তু থামেনি।

মনে হল, ‘আচ্ছা, এ ভাবে গুলিতে যদি ভারতে মারা যেতেন কোনও বড় রাজনৈতিক নেতা?’ খুব ভুল না ভাবলে, পরিস্থিতি হত অগ্নিগর্ভ। হয়তো রেল অবরোধ হত। রাস্তা আটকে বিক্ষোভকারীরা বসে পড়ায় থমকে যেত বাসের চাকা। হয়তো রাজনৈতিক সংঘর্ষই বেঁধে যেত কত জায়গায়। সেখানে জাপানে মানুষ এত শৃঙ্খলাপরায়ণ যে, এত বড় ঘটনার অভিঘাতও তাঁদের কাজের ছন্দ নষ্ট ভেস্তে দিতে পারেনি। এমনিই কী আর একটা বিশ্বযুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ পারমাণবিক আক্রমণের আঘাত সামলেও বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির সঙ্গে টক্কর দিতে পারে!

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় টোকিয়োর একদম মাঝখানে, শিনজ়ুকু ডিস্ট্রিক্টে। আমি থাকি শিনজ়ুকু ডিস্ট্রিক্টের ওয়াসেডাতে। জানিয়ে রাখি, আবেরও বাড়ি কিন্তু শিনজ়ুকুতেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রোজ বাড়ি ফিরি মেট্রো রেলে। এ দিন যখন বাড়ি ফিরছি, লক্ষ্য করলাম, মেট্রোয় সহযাত্রীরা সকলেই মোবাইলে আবেকে নিয়ে বিভিন্ন খবর দেখছেন। এখানে কোনও কিছুতে বিরাট চিৎকার-চেঁচামেচি করা মানুষের ধাতে নেই। কিন্তু তবু এ দিনের ঘটনায় যে অধিকাংশ জন হতবাক, তা শরীরী ভাষায় স্পষ্ট। সহকর্মীদের মধ্যে আলোচনা শুনলাম, যে বন্দুক আবের প্রাণ কেড়ে নিল, তা নাকি তার নিজের হাতে তৈরি। জাপানে সব থেকে বেশি দিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আবে। এক সময়ে জাপানি অর্থনীতিকে মন্দা থেকে টেনে তোলার জন্য বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর— ‘আবেনমিক্স’। অথচ শুনলাম, তাঁকে ঘোর অপছন্দ বলেই হত্যা করেছে আততায়ী! সহকর্মীরা জানালেন, এখানে শোক পালনের জন্য সভা হয়। তা হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে ডাকা হবে। তবে ছুটি ঘোষণা, জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা— এ সব কিছু হয়নি। শান্ত শোকে মুহ্যমান জাপান।

সৈকত দাস, টোকিয়ো ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স-এর গবেষক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement