Benjamin Netanyahu

‘গণতন্ত্রের’ কাছে নত নেতানিয়াহু

ঘটনার সূত্রপাত জানুয়ারি মাসে। নতুন বছরে দেশের বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই থেকেই জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হয়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

জেরুসালেম শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৬
Share:

ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি।

শীর্ষ আদালতের হাত থেকে ক্ষমতা সরিয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চাইছিলেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, গণতন্ত্র খর্ব করার চেষ্টায় সরকার। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কাল রাত থেকে বিক্ষোভে উত্তাল হয় ইজ়রায়েল। তেল আভিভ ও পশ্চিম জেরুসালেমের রাস্তায় নামেন হাজার হাজার মানুষ। রাস্তা অবরোধ করে জায়গায় জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। সংঘর্ষ বাধে পুলিশের সঙ্গে। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে, অনেকেই বলতে শুরু করেন নেতানিয়াহুর গদি টলমল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান থেকে সরতে বাধ্য হলেন তিনি। আজ সন্ধ্যায় নেতানিয়াহু জানালেন, আপাতত স্থগিত থাকছে বিচার ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাব।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত জানুয়ারি মাসে। নতুন বছরে দেশের বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই থেকেই জনমানসে ক্ষোভ তৈরি হয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তেই তেল আভিভে প্রধানমন্ত্রী-বিরোধী বিক্ষোভ দেখানো চলতে থাকে। কিন্তু কাল রাতে ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি পড়ে। নেতানিয়াহুর বিচার ব্যবস্থা সংস্কারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন তাঁরই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্ট। গত কাল সন্ধ্যায় তাঁকে বহিষ্কার করে দেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরেই রাস্তায় নেমে পড়েন কাতারে কাতারে মানুষ। নেতানিয়াহুর বাড়ির উদ্দেশে যান বিক্ষোভকারীরা। একটি সূত্রের দাবি করা হয়েছে, বিক্ষোভকারীদের ভয়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন প্রধানমন্ত্রী।

দেশের সর্ববৃহৎ কর্মী সংগঠন ‘দ্য হিস্টাড্রুট’ বন্‌ধ ডাকে। সরকারি কর্মীদের বন্‌ধে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয় ওই লেবার ইউনিয়ন। গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইজ়রায়েলি দূতাবাসগুলির কর্মীরাও এই প্রতিবাদে শামিল হন। আজ সকালে তেল আভিভের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে যায়। কারণ, কর্মীরা বন্‌ধ করেছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, সরকারের প্রস্তাবিত বদল ঘটলে দেশের গণতান্ত্রিক পরিচালন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নেতানিয়াহু ও তাঁর সমর্থকদের দাবি, দেশের বিচার ব্যবস্থার হাতে প্রচুর ক্ষমতা। তা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি হলে ইজ়রায়েলের সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। আসল ক্ষমতা চলে আসবে নেতামন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও সরকারি কর্তাদের হাতে। সুপ্রিম কোর্টের রায় নস্যাৎ করে দেওয়ার মতো ক্ষমতাও থাকবে ইজ়রায়েলি পার্লামেন্টের। ভোটাভুটিতে যদি পার্লামেন্টের ১২০ জনের মধ্যে ৬১ জন বিরোধিতা করে, তা হলেই সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত খারিজ হয়ে যাবে।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়। আরও একটি প্রস্তাব পেশ করেছে সরকার। তাতে ইজ়রায়েলের সংবিধান মেনে দেশে যে মূল আইন ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে, তার কর্তৃত্ব আর সুপ্রিম কোর্টের কাছে থাকবে না। তৃতীয় প্রস্তাবটি চমকে যাওয়ার মতো। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিয়োগ ব্যবস্থাও চলে যাবে পার্লামেন্টের হাতে। বিচারক নিয়োগ হবে রাজনীতিকদের সিদ্ধান্তে। অর্থাৎ দেশের বিচার ব্যবস্থা কার্যত ‘কলের পুতুল’ হয়ে পড়বে। এ কথাই শুক্রবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গ্যালান্ট একটি টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘ক্রমশ মিলিটারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে দেশ।’’ পরের দিনই তাঁকে বহিষ্কার করেন নেতানিয়াহু। আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাস্তায় নেমে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে দেখে প্রেসিডেন্ট আইজ়্যাক হেরজ়োগ নেতানিয়াহুকে ডেকে বিচার ব্যবস্থা সংস্কার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ইজ়রায়েলের মানুষের একতার কথা ভেবে, আমার নিজের দায়িত্ববোধ থেকে, আমি অবিলম্বে বিচার ব্যবস্থা সংস্কার প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার কথা বলছি।’’

প্রেসিডেন্টের কথাই রাখলেন নেতানিয়াহু। দিনের শেষে নিজেদের অবস্থান থেকে সরতে বাধ্য হলেন। তবে এতেও তাঁর স্বস্তি নেই। নেতানিয়াহুর অতি-দক্ষিণপন্থী শাসক জোটের সদস্যেরা তাঁকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন, বিচার ব্যবস্থায় প্রস্তাবিত সংস্কার করা না–হলে, তাঁরা পদত্যাগ করবেন। সে ক্ষেত্রে সরকার পড়ে যেতে পারে। ইজ়রায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-ভির, আইন মন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন-সহ আরও বহু শীর্ষস্থানীয় নেতার দাবি, ‘‘সংস্কার হবেই।’’ সংবাদ সংস্থা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement