নিহত নাবালকদের শেষকৃত্যে অসংখ্য মানুষের ভিড়। রবিবার, ইজ়রায়েল অধিকৃত গোলান হাইটসে। ছবি: রয়টার্স।
গাজ়ায় হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধ চলছে। এর মধ্যেই ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে নয়া জটিলতা। গত কাল ইরানের প্রশয়প্রাপ্ত লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজ়বুল্লা ফের হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েলে। তাদের রকেট হানায় ইজ়রায়েল অধিকৃত গোলান হাইটসে ১২ জন নাবালকের মৃত্যু হয়েছে। ইজ়রায়েল জানিয়েছে, এর ‘দাম দিতে হবে’ হিজ়বুল্লাকে।
দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননের মাটি ব্যবহার করে ইজ়রায়েলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হিজ়বুল্লা। পাল্টা হুঙ্কার ছাড়ছে ইজ়রায়েলও। কিন্তু এই পরিস্থিতি যাতে যুদ্ধের দিকে না গড়ায়, সে নিয়ে বারবার সতর্ক করে চলেছে আমেরিকা-ব্রিটেন। তাদের পরামর্শ, একই সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে জড়ানো ইজ়রায়েলের পক্ষে ভাল হবে না। গাজ়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে হিজ়বুল্লার হামলার তীব্রতা আরও বেড়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এত বড় হামলা, এই প্রথম। হিজ়বুল্লা অবশ্য গোলান হাইটসের ঘটনার দায় নিতে অস্বীকার করেছে। সে কথা মানতে রাজি নয় তেল আভিভ। তাদের দাবি, হিজ়বুল্লা জড়িত থাকার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘‘হিজ়বুল্লা এই ঘটনার জন্য দায়ী এবং এর দাম ওদের দিতে হবে। শত্রুদের উপর চরম প্রত্যাঘাত করা হবে।’’
গত কালের হামলার পরে ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান টহল দেয় লেবাননের আকাশে। নিশানা করা হয় হিজ়বুল্লার একাধিক ঘাঁটিকে। কাল সারা রাত কড়া নজর রাখা হয় সীমান্তবর্তী এলাকায়। আজ সকালে ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। তবে হিজ়বুল্লা ঘাঁটিতে কোনও হতাহতের খবর মেলেনি।
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, আনুমানিক ৩০টি রকেট লেবাননের দিক থেকে ইজ়রায়েলে এসে পড়েছিল। ১২টি বাচ্চার মৃত্যুর পাশাপাশি ৪৪ জন জখম হয়েছেন। নিহত বাচ্চাগুলি একটি ফুটবল মাঠে খেলছিল। এ সময়ে রকেট এসে পড়ে।
গোলান হাইটস অঞ্চলটি ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার কাছ থেকে দখল করেছিল ইজ়রায়েল। ১৯৮১ সালে এখানে নিজেদের প্রশাসন গঠন করে তারা। আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী গোলান হাইটসকে ইজ়রায়েল-অধিকৃত এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়। বিশ হাজার ড্রুজ় আরবের বাস এখানে। এরা নিজেদের সিরীয় বলে দাবি করে। ইজ়রায়েলি নাগরিকত্ব এরা গ্রহণ করেনি। ফলে হিজ়বুল্লার হামলার পরে আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে, যে ১২টি বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে, তারা কেউ ইজ়রায়েলি নাগরিক নয়। ইজ়রায়েলের বিরোধী দলনেতা জাইর লাপিদের কথায়, ‘‘ফুটবল মাঠে যে বাচ্চাগুলি মারা গিয়েছে, তারা আমাদের পরিবারের যে কেউ হতে পারত। তাই ওরা আমাদেরই সন্তান।’’ ইজ়রায়েল সরকারও জানিয়েছে, শোধ তারা নেবেই।