গাজ়ায় স্থল পথে পুরো মাত্রায় অভিযান শুরু করতে চলেছে ইজ়রায়েল। —ফাইল চিত্র।
যে কোনও সময় গাজ়ায় স্থল পথে পুরো মাত্রায় অভিযান শুরু করতে চলেছে ইজ়রায়েল। আজ রাতে গাজ়ায় নিয়ন্ত্রিত অভিযান চালিয়েছে ইজ়রায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। গাজ়ায় ট্যাঙ্ক, পদাতিক বাহিনী এবং নৌ-কমান্ডো পাঠিয়েছে ইজ়রায়েল। আইডিএফ বলেছে, স্থলপথে পূর্ণ মাত্রায় অভিযানের আগে নিয়ন্ত্রিত আক্রমণ চালানো হচ্ছে।
হামাস আজ দাবি করেছে, তারা দক্ষিণ ইজ়রায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। হামাসের সামরিক বিভাগের তরফে বলা হয়েছে, স্টেরোড, অ্যাশডোড শহর লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। অ্যাশকেলন শহরেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে হামাস।
গাজ়া ভূখণ্ডে স্থলপথে অভিযান শুরু আগে হামাসের তৈরি সুড়ঙ্গগুলিকে নিশানা করেছে আইডিএফ। মাটির প্রায় ৮০ মিটার গভীরে, কয়েকশো কিলোমিটার বিস্তৃত সুড়ঙ্গ, মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে। মাটির নীচ দিয়ে ঢুকে গিয়েছে ইজ়রায়েলের ভূখণ্ডে।
সমুদ্র উপকূলবর্তী গাজ়া স্ট্রিপ ও তার সীমান্ত অঞ্চলে এমন অসংখ্য সুড়ঙ্গ রয়েছে। কোনও সুড়ঙ্গ হামলার জন্য তৈরি করা হয়েছে, কোনওটি তৈরি হয়েছে পাচারের জন্য, কোনও সুড়ঙ্গে জিনিসপত্র মজুত করে রাখা হয়, কোনওটি আবার হামাসের গোপন ঘাঁটি। ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের আবহে নানা সূত্রে বিষয়গুলি আলোচনায় উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে পড়া হামাসের এই ডেরা ইজ়রায়েলের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।
মাটির এতটাই নীচে এই সুদূর বিস্তৃত টানেল, যে ইজ়রায়েলের টানা বোমাবর্ষণে সেগুলি সামান্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন জানিয়েছেন, মসুলকে আইএস জঙ্গিদের দখলমুক্ত করতে ন’মাস ধরে লড়তে হয়েছিল ইরাককে। হামাসকে হটাতে তার থেকেও বেশি বেগ পেতে হতে পারে ইজ়রায়েলকে। অস্টিনের আশঙ্কা, ওই সব সুড়ঙ্গের দিকে দিকে বিস্ফোরক পুঁতে রাখা আছে। মানববোমাও থাকতে পারে। ইজ়রায়েল আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কিছু সুড়ঙ্গ খুঁজে বার করেছে। ২০২১ সালের সংঘর্ষের পরে হামাসের নেতা ইহেয়া আল-সিনওয়ার বলেছিলেন, ‘‘ওরা বলছে ওরা হামাসের ১০০ কিলোমিটার সুড়ঙ্গ ধবংস করেছে। আমি বলছি, গাজ়া স্ট্রিপে অন্তত ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ রয়েছে। ওরা যদি সত্যি কথাও বলে থাকে, তা হলেও ২০ শতাংশ ধ্বংস করেছে। তার বেশি পারেনি।’’
৮৫ বছরের এক বৃদ্ধ ইয়োচেভেদ লিফশিৎজ়ের মুখে শোনা গিয়েছে সুড়ঙ্গ-কাহিনি। ইজ়রায়েলি বৃদ্ধকে পণবন্দি করেছিল হামাস। সদ্য মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মাকড়সার জালের মতো। অনেক, অনেক সুড়ঙ্গ। মাটির নীচে কয়েক কিলোমিটার হেঁটেছিলাম।’’ ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্রও বলেছেন, ‘‘বিস্তারিত বলতে পারব না কত সংখ্যক সুড়ঙ্গ রয়েছে বা কত কিলোমিটার বিস্তৃত। কিন্তু এটুকু জানি সংখ্যায় অনেক। মাটির নীচে স্কুল ও বসতি এলাকাও রয়েছে।’’ যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের দাবি, হামাস চাইছে গাজ়ায় স্থল-অভিযান শুরু করুক ইজ়রায়েলি বাহিনী। সে ক্ষেত্রে এই সুড়ঙ্গগুলি অস্ত্র হবে হামাসের। ইজ়রায়েলি সেনা যদি সুড়ঙ্গে ঢুকেও পড়ে, তাদের রাস্তা জানা নেই। ফলে তাদের বিপাকে পড়তে হবে।
শোনা যাচ্ছে, সুড়ঙ্গের রহস্যজাল ভেদ করতে এক ধরনের ‘স্পঞ্জ বোমা’ তৈরি করছে ইজ়রায়েল। এতে আচমকাই বিস্ফোরণ ঘটে ফোম তৈরি হয় এবং পরে তা শক্ত হয়ে যায়। এই রাসায়নিক গ্রেনেডে বিস্ফোরক থাকে না। এটি সুড়ঙ্গের মাঝখানে থাকা ফাঁকা স্থানগুলিকে বুজিয়ে দেয়। সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হলে সেখান দিয়ে হামাস বাহিনী হামলা চালাতে পারবে না। স্পঞ্জ বোমা রাখা থাকে প্লাস্টিকের পাত্রে। পাত্রের ভিতরে দু’ধরনের তরল একটি ধাতুর পাত দিয়ে আলাদা করা থাকে। পাতটি সরালেই দু’টি তরল মিশে বিস্ফোরণ ঘটে। তৈরি করে ‘স্পঞ্জ-প্রাচীর’।