পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।
তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে আপাতত পঞ্জাব প্রদেশের অটক জেলে বন্দি তিনি। পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা ক্রিকেট তারকা ইমরান খানকে সেখানে খুবই অবহেলায় রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। সেই প্রেক্ষিতে ইমরানের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে জেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিল ইসলামাবাদ হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ইমরানের সঙ্গে যাতে তাঁর পরিবার ও বন্ধুরা দেখা করতে পারেন, সেই নির্দেশও দিয়েছে হাই কোর্ট। ইসলামাবাদ হাই কোর্ট তার রায়ে ১৯৭৮ সালের পাকিস্তান জেল আইনের কথা উল্লেখ করেছে। এর ৯২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যে কোনও বন্দিই আইনি পরামর্শ নিতে নিজের আইনজীবী এবং পরিবারবর্গের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন।
গত ৫ অগস্ট দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল এক দায়রা আদালত। আদালত ইসলামাবাদের পুলিশ প্রধানকে ইমরানকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ইমরানের আইনজীবীদের অভিযোগ, সেই নির্দেশ না মেনে ইমরানকে গ্রেফতার করেছিল লাহোর পুলিশ। একই সঙ্গে, দায়রা আদালত তার রায়ে বলেছিল, ইমরানকে যেন রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে রাখা হয়। সেই নির্দেশও না মেনে পাক পঞ্জাবের প্রত্যন্ত অটক জেলে এনে রাখা হয়েছে ইমরানকে। এবং সেখানেও নানা অধিকার থেকে ইমরানকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁর আইনজীবীদের। এ নিয়ে তাঁরা ইসলামাবাদ হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছিলেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই অটক জেল কর্তৃপক্ষের প্রতি একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন হাই কোর্টের বিচারপতি। যেখানে তিনি বলেছেন, ইমরানকে যেন জেলে প্রার্থনা করার আসন দেওয়া হয় এবং তিনি যেন পবিত্র কোরানের একটি ইংরেজি সংস্করণও দ্রুত পান। অটক থেকে ইমরানকে যাতে দ্রুত আদিয়ালা জেলে সরানো হয়, সেই আর্জিও হাই কোর্টকে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।
এ দিকে, সেনা ও সরকারের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে খুব সম্প্রতি নতুন পন্থা নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। সদ্য পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ ভেঙে দিয়ে ভোটের আগে নতুন তদারকি সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাহবাজ় শরিফের জোট সরকার। এরই মধ্যে কিছু সাংবাদিক-সহ মোট ১১ জনের উপরে টিভি চ্যানেলে মুখ দেখানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ওই ১১ জনের মধ্যে বেশির ভাগই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। এবং এঁরা প্রত্যেকেই প্রকাশ্যে শরিফ সরকার ও পাক সেনার কট্টর সমালোচনাও করে থাকেন। ‘পাকিস্তান ইলেকট্রনিক মিডিয়া রেগুলেটরি অথরিটি’ (পেমরা) গত কালই এ নিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করে। এতে ওই ১১ জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, কোনও চ্যানেলে এঁদের বক্তব্য দেখানো বা সাক্ষাৎকার নেওয়া হলে সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এই ১১ জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই কোনও না কোনও দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছে পাক সরকার, আর গ্রেফতারি এড়াতে এঁরা সকলেই আপাতত দেশছাড়া।