পাহাড়ি যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাক সেনা লড়েছে পঞ্জশিরে। ছবি: সংগৃহীত।
রবিবার সকালে কাবুলে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হেসে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আর মাত্র কিছুক্ষণ। তার পর সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ রাতের মধ্যেই পঞ্জশির উপত্যকার বিস্তীর্ণ এলাকায় তালিবান দখলদারির খবর প্রকাশ্যে এল!
তিনি পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হামিদ ফায়েজ। তাঁরই প্রত্যক্ষ তদারকিতে পাহাড়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েক হাজার পাক সেনা পঞ্জশিরের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি।
গত সপ্তাহে পঞ্জশিরে নিহত এবং গ্রেফতার হওয়া একাধিক তালিব যোদ্ধার কাছে পাক সেনার পরিচয়পত্র উদ্ধার করেছিল ‘ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (নর্দার্ন অ্যালায়েন্স)। মধ্য এশিয়ার একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, পাহাড়ে ঘেরা পঞ্জশিরে তালিবানের হয়ে লড়াইটা লড়েছে পাক সেনার ‘নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রি’ (এনএলআই) এবং এলিট ‘স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ’ (এসএসজি) কমান্ডোরা। তাদের সাহায্য পাওয়ার ফলেই পাহাড়ের যুদ্ধে অপটু তালিবানের পক্ষে ‘দুর্গম’ পঞ্জশিরে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। একই অভিযোগ করেছন নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের নেতা আহমেদ মাসুদও।
আইএসআই প্রধান হামিদ ফায়েজ। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ‘গিলগিট বালটিস্তান’ অঞ্চলের যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত এনএলআই ব্যাটালিয়ন পাহাড়ে যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ১৯১৩ সালে ভারতের ব্রিটিশ সরকার গিলগিট বালটিস্তানের উপজাতিদের নিয়ে তৈরি করেছিল ‘গিলগিট স্কাউটস’ বাহিনী। পরে যা পাক সেনায় মিশে যায়। ১৯৯৯ সালে কার্গিল, দ্রাস, বাটালিকের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে ভারতীয় সেনার পোস্ট দখলে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল এই বাহিনী।
অন্য দিকে, পাক সেনার এসএসজি কমান্ডো বাহিনীকে তুষারাবৃত উঁচু পাহাড়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সিয়াচেন হিমবাহে মোতায়েন ভারতীয় সেনার উপর একাধিক বার হামলা চালিয়েছে পাক সেনার এই কমান্ডো বাহিনী। পঞ্জশিরে এসএসজি কমান্ডোদের উপস্থিতির অভিযোগ করেছেন নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের যোদ্ধারাও।
শুধু মাটিতে হামলায় অংশগ্রহণ নয়, নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের মনোবল নষ্ট করতে আকাশপথেও হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। অত্যাধুনিক ‘নেসকম বুরাক’ ড্রোনের পাশাপাশি পাক বিমানবাহিনীর জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানও আহমেদ মাসুদ-আমরুল্লা সালেহ্র বাহিনীর উপর গত দু’দিন ধারাবাহিক বোমা বর্ষণ করেছে। পুরনো আমলের ‘এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম’ নিয়ে পাক আকাশ-হামলার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারেননি সালেহ্রা। শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।