কয়েক সপ্তাহ ধরেই তার খোঁজ চালাচ্ছিল বাংলাদেশ পুলিশ। অবশেষে সোমবার ঢাকার কমলাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার হল সামিউল রহমান ওরফে ইবন হামদান। পুলিশের দাবি, ২২ বছরের এই ব্রিটিশ যুবক গত ছ’মাস ধরে ঢাকা ও সিলেট থেকে আইএস-এর জন্য জঙ্গি নিয়োগের কাজ করছিল। প্রাথমিক জেরায় সে এই অভিযোগ মেনেও নিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বুধবার দু’জন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে এক জন প্রাক্তন বিচারপতির ছেলে, অন্য জন উচ্চপদস্থ আমলার সন্তান। ওই দুই যুবক জানিয়েছিল, ‘তাবলিঘ জামাত’ নামে এক শান্তিপূর্ণ ইসলামি সংগঠনের সদস্য হিসেবে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় যাওয়ার ছক কষেছিল তারা। তারা আরও জানায়, ব্রিটেনের কোনও এক নাগরিক এ কাজে দুই যুবককে সাহায্য করছে। এর পরই তৎপরতা বাড়িয়ে দেয় পুলিশ। দু’দিন আগে পুলিশ ঘোষণাও করে, আল-কায়দার সঙ্গে যুক্ত এক সন্দেহভাজন ব্রিটিশের খোঁজ চলছে। আর তার পরেই সামিউলের গ্রেফতারি। পুলিশ এক মুখপাত্র জানিয়েছে, সামিউল আইএস এবং অল-নুসরা ফ্রন্টের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল।
ভাইয়ের এ হেন কীর্তিকলাপের কথা বিন্দুবিসর্গ জানতেন না বলে দাবি করেছেন সামিউলের বোন। পুলিশ জানিয়েছে, পূর্ব লন্ডনের হলবোর্নে সপরিবার থাকত সামিউল। নিয়মিত মদ ও মাদক সেবন, বাড়িতে চিৎকার-ঝামেলা সব মিলিয়ে উশৃঙ্খল হিসেবে বদনাম ছিল তার। মাঝখানে এক বার জেলেও গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরার পরই সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল সামিউল, জানিয়েছেন তারই এক প্রতিবেশী মহিলা। তাঁর দাবি, জেলে থাকার সময়ই ধর্ম পরিবর্তন করে সে। বন্ধ করে দেয় মদ ও মাদক সেবন। ওই মহিলার বয়ানে, “এর কিছু দিন পর পশ্চিম এশিয়ায় চলে গিয়েছিল সামিউল। আমি শুনেছি ওর মা প্রায়ই পড়শিদের কাছে আক্ষেপ করতেন, ছেলে বোধহয় আইএসে যোগ দেবে।” হলও তাই। পুলিশের ধারণা, সামিউলের বহু আত্মীয় বাংলাদেশে থাকেন। ফলে ঢাকায় আসাটা তার পক্ষে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। তার পরই শুরু হয়েছিল জঙ্গি নিয়োগের পালা।
আইএস যে দুনিয়া জুড়ে এতটা সংগঠিত ভাবে কাজ চালাচ্ছে, তা আগে না বোঝার কথা গত কালই স্বীকার করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, “আমার ধারণা আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান জিম ক্ল্যাপার এত দিনে বুঝতে পেরেছেন আইএসকে তাঁরা কম গুরুত্ব দিয়েছিলেন।” তাই সিরিয়ায় এখন জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমানহানা তীব্র করেছে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন জোটের দেশগুলি। কিন্তু তা দিয়ে যে তাদের বিশেষ কিছু ক্ষতি করা যাবে না, সে কথা জানিয়েছে আইএস। আবু তলহা নামে তাদের এক সদস্য একটি মার্কিন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকারে বলেছে, “আমরা এ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। ওরা মনে করে ওরা সব জানে। কিন্তু ওরা কিছুই জানে না।” তার আরও দাবি, তেল শোধনাগারে হানা দিয়েও তাদের আর্থিক মেরুদণ্ড ভাঙা যাবে না।