জঙ্গিবিরোধী সংবাদ প্রচার করার ‘অপরাধে’ ইরাকের এক চিত্রসাংবাদিক-সহ ১২ জনকে প্রকাশ্য রাস্তায় হত্যা করল আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া) জঙ্গিরা।
ইরাকের তিকরিত প্রদেশের একটি রাস্তায় গত কাল রাদ আল-আজওয়াই নামে ৩৭ বছরের ওই চিত্রসাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে খুন করা হয় রাদের ভাই এবং অন্য দু’জনকে। রাদের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর বাড়িতে হানা দিয়ে রাদ ও তাঁর ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিরা। অপরাধ, রাদ স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে চিত্র সাংবাদিকের কাজ করতেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, ওই দিনই তিকরিতে আরও ন’জনকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। আমেরিকার বিমান হামলার পরেও জঙ্গি-পরিস্থিতি যে ক্রমশ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, সে কথা জানিয়ে আজ ইরাকের আনবার প্রদেশ প্রশাসনের তরফে সেনা নামানোর আর্জি জানানো হয়েছে আমেরিকাকে। ইরাকের গোয়েন্দাদের দাবি, সিরিয়া এবং মসুল থেকে দশ হাজারেরও বেশি জঙ্গিকে আনবার প্রদেশে নামিয়েছে আইএস। বাগদাদের পশ্চিমের এই প্রদেশে জঙ্গি তৎপরতায় স্বাভাবিক ভাবেই রাজধানী অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। গত কালই মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব চাক হেগেল জানিয়েছিলেন, আনবার প্রদেশের বিপদের কথা তাঁরা জানেন। তবে যখন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাকে সেনা নামানোর প্রশ্ন একাধিক বার উড়িয়ে দিয়েছেন, তখন ইরাকের আর্জি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পেন্টাগনের আধিকারিকেরা।
এ দিকে, তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী কোবানে এখনও সেনার সঙ্গে জঙ্গিদের সম্মুখসমর অব্যাহত। তবে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে জঙ্গিদের ঠেকানো মুশকিল হবে বলে আজ জানিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। আমেরিকার তরফে কোবান পুনরুদ্ধার করতে বিমান হামলা চালানো হলেও তা যে জঙ্গিদের নিরস্ত করতে যথেষ্ট নয় সে কথাও জানিয়েছে পেন্টাগন।
কোবানের দখল নিয়ে লড়াইয়ে তুরস্কের মানুষ রাস্তায় নামলেও সেখানকার প্রশাসনের তরফে কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তুরস্কের বাসিন্দা কুর্দ সম্প্রদায়ের মানুষ কোবানকে জঙ্গিনিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে সরকারি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করে রাস্তায় নেমেছেন। ৩১ জনের মৃত্যুও হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে তাতে পরিস্থিতির সার্বিক কোনও পরিবর্তন হয়নি।
যদিও আজ রাষ্ট্রপুঞ্জ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কোবানের লড়াইয়ে সেনা পরাস্ত হলে জঙ্গিদের থামানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে। সেনাকে পিছু হটাতে আজও জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধি স্টেফান দে মিস্তুরা বসনিয়ার স্রেব্রেনিকা শহরের হত্যালীলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপু্ঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হওয়ায় যে ভাবে স্রেব্রেনিকায় আট হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, কোবানের মানুষের পাশে না দাঁড়ালে একই ঘটনা ঘটবে সেখানেও।
এই কুর্দ শহর জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে ৮ থেকে ১২ হাজার মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কাও করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। স্টেফানের কথায়, “স্রেব্রেনিকা হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ে? আমাদের আছে। আমরা ভুলতে পারব না। নিজেদের ক্ষমাও করতে পারব না কোনও দিন। এ বারও সাধারণ মানুষ বিপন্ন, আমরা আর চুপ করে থাকব না।”