কখনও হিজাব-বিরোধী আন্দোলন তো কখনও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ। যত দিন যাচ্ছে ইরানে বিক্ষোভের আঁচতত গনগনে হয়ে উঠছে। প্রশাসনও চুপ করে বসে নেই। কড়া হাতে বিক্ষোভদমন করতে লাঠি থেকে গুলি চালানো, চেষ্টার কসুর রাখছে না ইরানের সরকার। বুধবার তেহরানের একটি মেট্রো স্টেশনে এমনই এক বিক্ষোভ-জমায়েত হটাতে পুলিশ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। প্রতিবাদীরা সেখানে হিজাব-বিরোধী বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। হিজাব পুড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন অনেকে। তার পরেই আসরে নামে পুলিশ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োগুলির কোনওটিতে দেখা যাচ্ছে, গুলির শব্দ শুনে মেট্রো স্টেশনে হুড়োহুড়ি শুরু করেছেন যাত্রীরা। মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন অনেকে। তাঁদের ধাক্কা দিয়েই বাকিরা ছুটছেন স্টেশন থেকে বেরোনোর রাস্তার দিকে। অন্য একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, মেট্রোর ভিতরে প্রতিবাদরত যাত্রীদের মারধর করছে সাধারণ পোশাকের কয়েক জন। আন্দোলনকারীদের দাবি, ওঁরা সাধারণ পোশাকের পুলিশ।
গত সেপ্টেম্বর মাসে পোশাক-বিধি না মানার অভিযোগে নীতি-পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ইরানি তরুণী মাহশার আমিনির মৃত্যুর পরে ইরানে হিজাব-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলন সম্প্রতি তিন মাসে পড়েছে। পাশাপাশি, ২০১৯ সালে ‘রক্তাক্ত নভেম্বর’ আন্দোলনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশ জুড়ে তিন দিনের প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সে বছর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সরকার-বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের নির্বিচার গুলি চালনায় শয়ে শয়ে প্রতিবাদী নিহত হয়েছিলেন। সেই স্মৃতিতে ফের উত্তাল ইরান। তবে প্রশাসনও কড়া হাতে দমন করছে পরিস্থিতি।
গত দু’মাসে পুলিশ-প্রশাসনের হাতে অন্তত ৩০০ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। তাদের দাবি, প্রায় ১৫ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে। সরকারি ভবনে আগুন লাগানো ও সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগে এক জনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ধরপাকড় নিয়ে ভুয়ো খবরের সংখ্যাও অবশ্য কম নয়। ইরানে বিবিধ অপরাধে প্রায়ই সাজা হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকেই।