গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রতিবেশী দেশ আকাশপথে হামলা চালাতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল পাকিস্তান। পাকিস্তানের সেই আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে এ বার বায়ুসেনার মহড়া শুরু করল ইরান। এর পরেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি সত্যিই ইসলামাবাদের উপর হামলা চালাতে পারে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির সরকার। যদিও বায়ুসেনার মহড়া পাকিস্তানের উপর হামলার প্রস্তুতি কি না, তা নিয়ে এখনও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি ইরান।
ইরান সরকার শুক্রবার জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে আকাশপথে বায়ুসেনার মহড়া শুরু করেছে তারা। সে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় ‘শত্রু’দের বাধা দিতে বিশেষ ভাবে তৈরি ড্রোন ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি, সফল ভাবে বায়ুসেনার প্রতিরক্ষা মহড়াও শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান।
উল্লেখযোগ্য যে, আকাশপথে ইরান হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কায় চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে। অন্য দিকে, শুক্রবার সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিক এবং গোয়েন্দাকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার-উল-হক কাকর। পাক সেনা ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
ইরান-পাকিস্তান সংঘাতের সূত্রপাত মঙ্গলবার থেকে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বালুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জইশ আল অদলের ঘাঁটিতে মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান। পাকিস্তানের উপর হামলার কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের বিদেশমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ অল অদল বা ‘আর্মি অফ জাস্টিস’-এর ঘাঁটি ধ্বংস করা। ইরানের দাবি, এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ মূলত ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বলেও সে দেশের দাবি। আর সেই কারণেই জইশ অল অদল সংগঠনের ঘাঁটি উচ্ছেদ করতে পাকিস্তানের ‘সবজ কোহ’ গ্রামে মঙ্গলবার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান।
এই হামলার পরেই গর্জে ওঠে ইসলামাবাদ। ইরানের হামলায় পাকিস্তানের দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দেয়, ‘ফল ভুগতে হবে’ ইরানকে। এর পরে বৃহস্পতিবার ইরানের উপর পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের ‘মার্গ বার সরমাচার’ নামক ওই অভিযানে ‘বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসবাদী’র মৃত্যু হয়েছে।
ইরান এবং পাকিস্তানের হামলা-পাল্টা হামলার আবহে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। পাক হামলাকে মোটেও ভাল চোখে দেখেনি ইরান। তাদের বিদেশ মন্ত্রক বৃহস্পতিবারই তেহরানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ‘প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ’ কূটনীতিককে তলব করেছে এবং তাঁর কাছ থেকে পাক হামলার কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। এই আবহে ইরান বায়ুসেনার মহড়া শুরু করায়, দু’দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও জটিল হল বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।