অভিভাবকত্বের নতুন স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় বুধ বাঁধছেন সমকামী যুগলেরা। ছবি: সংগৃহীত।
পাঁচ বছরের খুদের স্কুলে হাজিরার ফর্মে অভিভাবকদের সই লাগবে। কিন্তু ফর্মে শুধু বাবা-মা লেখা থাকায় ধন্দে পড়ে গিয়েছিল ছেলেটি। কারণ সে সমকামী দম্পতির সন্তান। জানে না, কে তার বাবা, কে-ই বা মা!
ফ্রান্সে ২০১৩ সাল থেকে সমকামী বিয়ে আইনত স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু সমাজিক ভাবে বহু ক্ষেত্রেই সমকামী দম্পতিরা বৈষম্যের শিকার বলেই মনে করেন অনেকে। একই যুক্তিতে ফ্রান্সের জাতীয় আইনসভায় একটি সংশোধনী প্রস্তাব এনেছেন শাসক দলের এমপি ভ্যালেরি পেতি। তাতে বলা হয়েছে, স্কুলে স্কুলে অভিভাবকদের সই করার জায়গায় বাবা-মায়ের বদলে এ বার থেকে অভিভাবক-১, অভিভাবক-২ লেখার জায়গা থাকুক। গত মঙ্গলবার আইনসভার নিম্ন কক্ষে সেই প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। আগামিকাল প্রস্তাবটি সেনেটে পেশ করা হবে। আর তা অনুমোদন পেলেই তৈরি হবে ইতিহাস। সেনেটে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় বিল পাশ হওয়ায় কোনও বাধা থাকবে না বলেই মনে করছেন ভ্যালেরির সমর্থকেরা।
শুধু হাজিরা কেন, স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে ক্যান্টিন, পরীক্ষা-সহ ফর্ম ভরার সব ক্ষেত্রেই এখন বাবা-মায়ের নাম লেখাই দস্তুর। ভ্যালেরির দাবি, তাতে সমকামী অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আইনসভার আর এক সদস্য জেনিফার দে টেমারম্যানের মতে, নিয়মটা পুরনো এবং প্রথাগত পারিবারিক ধারণা থেকে তৈরি। তিনি বলেছেন, ‘‘এই ধরনের কিছু চলতি ধারণার জন্য যাতে কেউ সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে না করেন, সে দিকে নজর দেওয়া উচিত।’’
তবে অন্য মতও রয়েছে। বামপন্থী ও মধ্যপন্থীরা এই প্রস্তাবে সায় দিলেও বেজায় চটেছেন রক্ষণশীল এবং ক্যাথলিকরা। এমনকি প্রশ্ন উঠেছে মাকরঁ প্রশাসনের অন্দরেও। দেশের শিক্ষামন্ত্রী জঁ-মিশেল ব্লঁকের মতে, এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার গন্ডির বাইরে গিয়ে কাজ করছে। ফ্রান্সে সমকামী দম্পতিদের একটি শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি আলেকজ়ন্দ্র উরউইচ আবার মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রথমে এই প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছিলাম। কিন্তু নতুন নিয়মে অন্য বিপদ দেখছি। প্রশ্ন উঠছে, অভিভাবক ১ বা ২ কে হবেন, তা কে ঠিক করবেন? এই বিভাজন শেষ পর্যন্ত অভিভাবকদের মধ্যেই বৈষম্য তৈরি করবে না তো?’’
তবে প্রশ্ন যতই থাকুক না কেন বিলটি পাশ হলে অভিভাবকত্বের নতুন স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় বুধ বাঁধছেন সমকামী যুগলেরা।