প্রতীকী ছবি।
সীমান্ত মানে না ভাইরাস। ধনী-গরিব-দেশ-বিদেশ কিছুই বোঝে না। তাই পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে টিকার সমবণ্টনের কথা বারবারই বলে আসছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই কথা মাথায় রেখেই শরণার্থীদের টিকাকরণে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল ইন্দোনেশিয়া। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করল ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশের প্রশাসন ও একটি মানবাধিকার সংস্থা।
এ মাসের গোড়ায় ৮১ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী ইন্দোনেশিয়ার আচে প্রদেশের একটি নির্জন দ্বীপে পা রাখেন। তার আগে ১০০ দিন ধরে তাঁরা সমুদ্রে ভেসে ছিলেন। বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে একটা ভাঙাচোরা নৌকা করে আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিল দলটি। শেষে ইডামান দ্বীপে আশ্রয় নেন তাঁরা। কিছু মৎস্যজীবীর চোখে পড়েছিল লোকগুলোকে। তাঁরা মাছ ধরার ফাঁকে ওই দ্বীপে বিশ্রাম নেন। তাঁরাই খবর দেন স্থানীয় প্রশাসনকে। ৫ জুনের ঘটনা। পরের দিনই ৮১ জন শরণার্থীকে কোভিড প্রতিষেধক দেওয়া হয়।
মানবাধিকার সংস্থাটির কর্তা নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ আরও বলেন, ‘‘আমরা যখন ওঁদের খুঁজে পাই, খুবই অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন ওঁরা। খাবার নেই, জল নেই, বিদ্যুৎ নেই। কাছাকাছি দ্বীপে যাঁরা থাকেন, তাঁরা এসে খাবার দেন। আমরা ৫০টি জলের ট্যাঙ্ক নিয়ে যাই।’’ নাসিরুদ্দিনের কথায়, ‘‘ওঁদেরও তো বাঁচাতে হবে। তাই আমাদের ভাগ থেকে ওঁদের টিকার ব্যবস্থা করা হয়।’’
ইন্দোনেশিয়া সহানুভূতি দেখালেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যত্র কিন্তু শরণার্থীদের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘রিফিউজি কনভেনশন’-এ অন্তর্ভূক্ত নয় মালয়েশিয়া। এই দেশের সরকার আগে জানিয়েছিল, যে হেতু এটি অতিমারি, দেশে বসবাসকারী সকলকে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে নথিপত্রবিহীন অভিবাসী, শরণার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি মাসে মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, বিনামূল্যে দেশে বসবাসকারী সকলকে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, সরকারি পরিচয়পত্র ছাড়া কোভিড টিকা দেওয়া হবে না। ফলে শরণার্থীদের টিকা-ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মালয়েশিয়ায় মে মাস পর্যন্ত নথিভূক্ত শরণার্থীর সংখ্যা ১,৭৯,৫৭০। তার মধ্যে ৫৭ শতাংশই রোহিঙ্গা শরণার্থী। যদিও একটি সূত্রের দাবি, মালয়েশিয়ায় অন্তত ৩০ লক্ষ শরণার্থী রয়েছেন, যাঁদের নাম সরকারের ঘরে নথিভূক্ত নেই।
বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিবিরে রয়েছেন কমপক্ষে ৯ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী। বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শরণার্থী শিবির। ‘ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস’ (ইউএনএইচসিআর)-এর মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বলেন, ‘‘কোভিড অতিমারিতে শরণার্থীরা খুবই বিপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। একে তো এক জায়গায় একগাদা লোকের কোনও মতে মাথা গুঁজে থাকা। তার উপর অপরিষ্কার বাসস্থান। জলাভাব। ভয়ানক ভাবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এই সব জায়গায়। যেমন বাংলাদেশের কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে গত দু’মাসে ব্যাপক কোভিড সংক্রমণ ঘটেছে। এবং এখানে কারও টিকাকরণ হয়নি।’’ সংগঠনের আর এক কর্তার কথায়, ‘‘অতিমারি রুখতে টিকাকরণই একমাত্র পথ। ভাইরাস সীমান্ত বোঝে না। আমাদের সংহতি বোধেরও সীমান্ত না-বোঝাই উচিত।’’