প্রতীকী ছবি।
শিশুদের আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিয়ো নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন এক ভারতীয় চিকিৎসক। সেই চিকিৎসককে ছ’বছরের কারাদণ্ড দিল ব্রিটেনের আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘ডার্ক ওয়েব’-এ শিশুদের পর্ন সাইট চালাতেন। সেই ওয়েবসাইটে শিশুদের যৌন হেনস্তার আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিয়ো নিয়মিত শেয়ার করা হত।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম কবির গর্গ। বয়স ৩৩। গত নভেম্বরে কবিরকে তাঁর লিউইসহ্যামের বাড়ি থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সেই সময় কবির তাঁর ল্যাপটপে তাঁর তৈরি শিশুদের পর্নসাইট খুলে বসেছিলেন। ওয়েবসাইটের ‘মডারেটর’ হিসাবে লগ ইনও করা ছিল তাঁর ল্যাপটপ থেকে। তদন্তকারীরা সেই ল্যাপটপ ঘেঁটে অন্তত ৭০০০ শিশুদের শরীরের আপত্তিকর ছবি এবং তাদের হেনস্থার ভিডিয়ো উদ্ধার করে।
জানুয়ারি মাসেই কবিরের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত ৮টি অপরাধের মামলা হয়। ব্রিটেনের আদালতে তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, নিজের ওয়েবসাইটের জন্য সব কিছু করেছেন কবীর। নিয়মিত ‘ডার্ক ওয়েব’-এর সেই সমস্ত ওয়েবসাইটে তিনি ঘোরাফেরা করতেন, যেখানে শিশুদের যৌন হেনস্থা নিয়ে আলোচনা হত। সেখান থেকেই নিজের পর্ন সাইটে দেওয়ার ছবি, ভিডিয়ো তুলে আনতেন তিনি। কবিরের ওই ওয়েবসাইটের নাম ছিল ‘দ্য অ্যানেক্স’। দুনিয়াজুড়ে ৯০ হাজার সদস্যও ছিল ওই ওয়েবসাইটের। যাঁরা টাকার বদলে কবিরের সাজানো বিষয়বস্তু নিয়মিত দেখতেন।
চিকিৎসক কবীর গর্গ। ছবি: সংগৃহীত
গত ২৩ জুন ব্রিটেনের উলউইচ ক্রাউন কোর্টে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে কবিরকে। তাঁকে সাজা শোনানোর সময় বিচারক বিস্মিত হয়ে মন্তব্য করেছেন, কবিরের এই অপরাধ আরও ভয়াবহ কারণ, উনি নিজে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। শিশুদের উপর যৌন হেনস্থার মানসিক প্রভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে তাঁর। সে সব জেনেও তিনি এ কাজ করেছেন।
লখনউয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেছিলেন কবির। এর পর বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেসে কাজ করেছেন বেশ কিছু দিন। সেখান থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের লিউইসহ্যামে চলে আসেন। সেখানে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু তার আড়ালে শিশুদের পর্নসাইট চালানোর এই ব্যবসাও শুরু করেছিলেন তিনি।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন মনোরোগের চিকিৎসক হিসাবে শিশুদের মনস্তত্ত্ব এবং যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত বহু তথ্য, নথি এবং প্রতিবেদন জোগাড় করেছিলেন কবির। তাঁর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত একটি বইও উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। বইটির নাম, ‘এ স্টাডি অন চাইল্ড অ্যাবিউজ ইন ইন্ডিয়া।’ যা ভারতে শিশুদের যৌন হেনস্তা নিয়ে লেখা।
কবিরের ঠিক এক বছর আগে এই লন্ডন থেকেই ম্যাথিউ স্মিথ নামে ৩৪ বছরের এক যুবককে গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দারা। ম্যাথিউয়ের কাছ থেকেও শিশুদের আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিয়ো পাওয়া গিয়েছিল। তার মধ্যে অসংখ্য ভিডিয়ো ছিল ভারতীয় শিশুদের। পরে তদন্তে জানা যায়, ভারত থেকে ওই সমস্ত ভিডিয়ো আনানোর জন্য দু’জন কিশোর ৬৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ম্যাথিউ। এদের কাজ ছিল, ছোট ছোট শিশুদের যৌন হেনস্থা করে তাদের ভিডিয়ো ম্যাথিউকে পাঠানো।
তদন্তকারীরা পরে জানতে পারেন। স্মিথ বেশ কিছু দিন ভারতে গিয়ে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। বিশেষ করে অনাথাশ্রমগুলির সেই সময় কাজ করেছিলেন তিনি। পরে ভারত থেকে ব্রিটেনে ফেরার পরও এই সমস্ত অনাথাশ্রম এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল ম্যাথিউয়ের সঙ্গে। তবে ভারতীয় চিকিৎসক কবিরের সঙ্গে ম্যাথিউয়ের কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, তা এখনও জানতে পারেনি ব্রিটেনের ওই তদন্তকারী সংস্থা।