সাংবাদিকদের মুখোমুখি সুনীতা উইলায়ামস। সোমবার ওয়াশিংটনে। ছবি: পিটিআই।
ট্যাক্সি হাজির। তেমন সাধারণ ট্যাক্সি নয়, ‘স্পেস ট্যাক্সি’! ভারতীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার সকালে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেবে বোয়িংয়ের সিএসটি-১০০ স্টারলাইনার স্পেস ট্যাক্সি। তাকে মহাকাশে নিয়ে যাবে ‘ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স এলএলসি’ (ইউএলসি)-র অ্যাটলাস-৫ রকেট। ট্যাক্সির দুই সওয়ারির মধ্যে অন্যতম ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস। বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে ঘরেই ফিরছি।’’
দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ সফরের প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু নানা প্রযুক্তিগত সমস্যায় ভুগছিল বোয়িং। এই প্রথম ‘বোয়িং’ ও ‘ইউএলসি’-র যৌথ উদ্যোগে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। তারা যে নিরাপদে মানুষকে মহাকাশে পৌঁছে দিতে সক্ষম, এই অভিযানে তা প্রমাণ করতে মরিয়া বোয়িং।
এই অভিযানে সুনীতার সঙ্গী বুচ উইলমোর। দুই মহাকাশচারীর নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তাদের অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম ফ্রি বলেন, ‘‘সুনীতা ও বুচ আমাদের সদস্য। আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওঁদের নিরাপত্তা।’’ নাসা নিজেই অবশ্য ২০১৪ সালে বোয়িং এবং ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সকে বেসরকারি মহাকাশযান তৈরিতে অনুমতি দিয়েছিল ও সেই মতো চুক্তি করেছিল। স্পেসএক্স ২০২০ সাল থেকেই নিয়মিত ভাবে তাদের ‘ক্রু ড্রাগন’-এ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বোয়িংয়ের যান ২০১৯ সালে সফ্টওয়্যার সমস্যায় ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় চেষ্টাতেও তারা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। ২০২২ সালে তারা মানুষ ছাড়া একটি যান মহাকাশ স্টেশনে পাঠায়। তার পর এ বারের অভিযান।
৫৯ বছর বয়সি সুনীতা নৌবাহিনীর উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেস্ট পাইলট। এর আগেও দু’বার মহাকাশে গিয়েছেন তিনি। একবার ২০০৬ সালে। দ্বিতীয়বার ২০১২-তে। নাসা-র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৩২২ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন তিনি। এক সময়ে মহিলা নভশ্চর হিসেবে মহাকাশে সর্বোচ্চ সময় হাঁটার (স্পেসওয়াক) রেকর্ডও সুনীতার ঝুলিতে ছিল। সাত বারের স্পেসওয়াকে মোট ৫০ ঘণ্টা ৪০ মিনিট মহাকাশে হেঁটেছেন তিনি। পরে সুনীতার রেকর্ড ভেঙে দেন পেগি হুইটসন। তিনি ১০ বার স্পেসওয়াক করেছেন। নাসা জানিয়েছে, বোয়িং স্টারলাইনার স্পেসক্রাফ্টের ‘ক্রু ফ্লাইট টেস্ট মিশন’-এর পাইলট হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে সুনীতা। এ বার মহাকাশ-পাড়ির পালা। মহাকাশ সফরে গণেশের একটি মূর্তি নিয়ে যাচ্ছেন সুনীতা। বলেছেন, ‘‘গণেশ আমার লাকি চার্ম।’’ ধর্মবিশ্বাসী সুনীতা এর আগের সফরে ভগবত গীতা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো তাদের গগনযান অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুরোদমে। এই প্রথম মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ভারত। চার ‘গগনযাত্রী’ নির্বাচিত হয়ে গিয়েছেন। প্রশিক্ষণ চলছে তাঁদের। তবে এই দলে কোনও মহিলা নেই। ইসরোর ‘হিউম্যান স্পেস ফ্লাইট সেন্টার’-এর প্রধান এম মোহন বলেন, ‘‘ক্যাপ্টেন সুনীতা উইলিয়ামস এক জন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী। আরও এক বার মহাকাশে যাচ্ছেন। উনি আমাদের গর্ব। ওঁর সাফল্য কামনা করি।’’