বিয়ের পর আবতার ও নবনীত। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
বিবাহবিচ্ছেদ চাওয়ায় বাথটাবে ডুবিয়ে খুন করেছিলেন স্ত্রীকে। শাস্তি এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এ দিক ও দিক। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। ১২ বছর পর মার্কিন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি।
ওই ব্যক্তির নাম অবতার গ্রেওয়াল বলে জানা গিয়েছে। বয়স ৪৪ বছর। সোমবার তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা প্রদেশের রাজধানী ফিনিক্সের সুপেরিয়র আদালত। আগামি ২৩ মে সাজা ঘোষণা হবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৫ সালে নবনীত কউরের সঙ্গে বিয়ে হয় অবতার গ্রেওয়ালের। ভারতেই বিয়ে সারেন তাঁরা। কিন্তু কর্মসূত্রে কানাডায় থাকতেন অবতার। আর ফিনিক্সের আওয়াতুকীতে থাকতেন নবনীত।
আরও পড়ুন: অনাস্থা ভোট ঘিরে বোমা-ভাঙচুরে অগ্নিগর্ভ বনগাঁ, আমরাই জিতেছি, দাবি তৃণমূল-বিজেপি দুপক্ষেরই
শুরুতে সব ঠিকঠাক থাকলেও, যত সময় যায়, ধীরে ধীরে তাঁদের দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় দূরত্ব। তার জেরে ‘সন্দেহবাতিক’ হয়ে ওঠেন অবতার। স্ত্রী কখন, কোথায় রয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে ফোন করে খবর নিতে শুরু করেন তিনি। কোনও কারণে ফোন না ধরলে, নবনীতের অফিস এবং বন্ধুবান্ধবদেরও ফোন করতে শুরু করেন তিনি।
এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নবনীত। হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার করতে হয়। নবনীত কানাডায় এসে চিকিৎসা করান, এমনটাই চেয়েছিলেন অবতার। কিন্তু স্বামীর বিরুদ্ধে গিয়ে আমেরিকাতেই অস্ত্রোপচার করান নবনীত। তা নিয়ে ঝামেলা চরমে উঠলে বিবাহ বিচ্ছেদ দাবি করেন তিনি।
আদালতে অবতার গ্রেওয়াল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কিন্তু তাতে রাজি হননি অবতার। বরং সামনাসামনি কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে চান। সেই মতো ২০০৭-এ কানাডা থেকে ফিনিক্স এসে পৌঁছন। বিমানবন্দরে তাঁকে নিতেও আসেন নবনীত। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে চাননি তিনি। বরং অবতারকে নিজের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথাও জানান।
সেই নিয়ে বচসা চরমে উঠলে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। গলা টিপে ধরে বাথটাবের জলে নবনীতের মাথা চেপে ধরেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় নবনীতের। স্ত্রীকে খুন করে ভারতে পালিয়ে আসেন অবতার। দীর্ঘ আইনি টানাপড়েনের পর ২০১১ সালে তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়। সেই থেকে মামলা চললেও, এত দিন পর দোষী সাব্যস্ত হলেন অবতার।
আরও পড়ুন: কর্নাটক জট কাটার ইঙ্গিত, বিদ্রোহী বিধায়কদের মামলার রায় আগামিকাল, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
তবে আদালতে সওয়াল জবাব চলাকালীন অবতারকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টায় ত্রুটি রাখেননি তাঁর আইনজীবী রিচার্ড র্যান্ডাল। আদালতে তিনি জানান, পরিকল্পনা করে স্ত্রীকে খুন করেননি অবতার। দাম্পত্য জীবনে যথেষ্ট সুখী ছিলেন তাঁরা। একসঙ্গে খেতে, কেনাকাটা করতে যেতেন। বচসা চলাকালীন দুর্ঘটনাবশত ব্যাপারটা ঘটে গিয়েছে। তার পর থেকে নিজেকে ক্ষমা করতে পারেননি অবতার। একাধিক বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু তাঁর যুক্তি উড়িয়ে দেন সরকারি আইনজীবী জুয়ান মার্টিনেজ। তিনি জানান, স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইতেন অবতার। গলা টিপেই নবনীতকে খুন করেন তিনি। কিন্তু নবনীত আদৌ মারা গিয়েছেন কি না বুঝতে পারছিলেন না, তাই দেহটিকে টেনে বাথরুমে নিয়ে যান এবং বাথটাবের জলে নবনীতের মুখ চেপে ধরেন।
নবনীতের সঙ্গে বিয়ের আগে, ২০০২ সালে আরও এক বার তিনি বিয়ে করেছিলেন বলেও শুনানি চলাকালীন আদালতে জানান অবতার। কিন্তু ২০০৪ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁর।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।