মঞ্জুনাথ নায়ডু
সেই হল-ভরা দর্শক। সেই কৌতুকাভিনেতা। সেই কৌতুক করতে করতেই মঞ্চে নিথর হয়ে যাওয়া। তিন মাসের ব্যবধানে ফের একই রকম ঘটনা!
সে বার হয়েছিল লন্ডনে। আর এ বার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কৌতুকাভিনেতা মঞ্জুনাথ নায়ডু দুবাইয়ের একটি হোটেলের মঞ্চে গত শুক্রবার প্রাণ হারালেন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে। বয়স মাত্র ৩৬। উদ্বেগে ভুগছেন বলে জানিয়েছিলেন মঞ্জুনাথ।
শুক্রবার লোক হাসাতে হাসাতে মঞ্চেও সে কথা বলেছিলেন। অভিনয় করতে করতেই পাশে রাখা একটা বেঞ্চে হঠাৎ করে বসে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বসার পরে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মঞ্চেই লুটিয়ে পড়েন মঞ্জুনাথ। যদিও তখনও দর্শকরা ভাবছেন, সেটাও শিল্পীর কৌতুকেরই অংশ। যার জন্য ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে কোনও ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয়নি। ঠিক যেমনটা ঘটেছিল ব্রিটিশ কৌতুকশিল্পী ইয়ান কগনিটোর ক্ষেত্রে। ষাটোর্ধ্ব এই শিল্পী গত ১৪ এপ্রিল মঞ্চে অভিনয় করতে করতেই মারা যান। সে বারও দর্শকরা ভেবেছিলেন, মজা করছেন কগনিটো।
মঞ্জুনাথের আবু ধাবিতে জন্ম। পরে চলে আসেন দুবাই। তাঁর বন্ধু এবং সহ-কৌতুকশিল্পী মিকদাদ দোহাদওয়ালা বলেছেন, ‘‘সে দিনের অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ পর্বে ছিল ওর কৌতুক। মঞ্চে উঠে গল্প বলে রোজকার মতোই লোক হাসাচ্ছিল। বাবা আর পরিবারের কথাও বলছিল। এর পরেই বলল ও উদ্বেগে ভুগছে ইদানীং। এই গল্প শুরুর এক মিনিটের মধ্যেই সব শেষ!’’ উদ্বেগের কথা বলতে বলতে হঠাৎ কেন থেমে গেলেন মঞ্জুনাথ— কেউ তখন
বোঝেননি। তিন মিনিট ও ভাবেই পড়েছিলেন তিনি। যত ক্ষণে বোঝা গেল, কিছু একটা ঘটে গিয়েছে, প্যারামেডিকেরা এসেও কিছু করতে পারেননি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মিকদাদ জানিয়েছেন, মঞ্জুনাথের বাবা-মা মারা গিয়েছেন। এক ভাই আছে, এ ছাড়া কোনও আত্মীয়-স্বজন নেই। কৌতুক জগতের লোকজনই ছিল ওর পরিবার। পাঁচ বছর ধরে কৌতুকাভিনয় করছিলেন।
মঞ্জুনাথের আর এক বন্ধু গ্রেস ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘আমার সতীর্থ, অসাধারণ শিল্পী, অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর, বড় মনের মানুষ। মঞ্চেই চলে গেল। যা করতে ভালবাসত, সেটা করতে করতেই মৃত্যু হল ওর। আমাদের স্মৃতিতে ও বেঁচে থাকবে ‘ম্যাঙ্গো’ হয়ে। আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে ও। ওর জন্য আমিও কৌতুকশিল্পী
হয়েছি, ও বলেছিল আমার মধ্যে সে ক্ষমতা আছে।’’
মঞ্চে মঞ্জুনাথের মৃত্যু দেখে অনেকের মনে পড়েছে চার্লি চ্যাপলিনের ‘লাইমলাইট’ ছবিটির কথা। ১৯৫২ সালের এই ছবিতেও চার্লি যে ক্লাউনের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, সে লোক হাসাতে হাসাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মঞ্চে পড়ে যায়। দর্শক সেখানেও ভেবেছিলেন, এ-ও বুঝি কোনও কৌতুক!