অশোক চন্দওয়ানে
জনসমক্ষে এই সংস্থা নিজেদের ‘মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ তৈরির’ মাধ্যম বলে দাবি করে। সমাজমাধ্যমে কার্যত বিপ্লব নিয়ে আসা মার্ক জ়াকারবার্গের সেই ফেসবুক তলে তলে বিদ্বেষের মাধ্যমে মুনাফা লাভের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে আঙুল তুললেন সংস্থায় কর্মরত এক ইঞ্জিনিয়ার। গত কাল সংস্থার নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি।
অশোক চন্দওয়ানে। বছর আঠাশের ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই ইঞ্জিনিয়ার সংস্থার নিজস্ব পোর্টালে একটি দীর্ঘ ই-মেল করেছেন। ১৩০০ শব্দের সেই মেলটির ছত্রে ছত্রে নানা লিঙ্ক জুড়ে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কী ভাবে ঘৃণা ছড়ানোতে এখন উস্কানি দিচ্ছে জ়াকারবার্গের এই সংস্থা। ফেসবুক নিজে থেকে কখনও খোলসা না করলেও অনেকেই বলে থাকেন, এই সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার পদ বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় চাকরির একটি। অশোককে বিপুল পরিমাণ বেতন দেওয়া হত। কিন্তু অশোক জানিয়েছেন, নৈতিকতার যে প্রত্যাশা নিয়ে তিনি এই সংস্থায় এসেছিলেন, তা পূরণ হচ্ছিল না। আমেরিকা তো বটেই, বিশ্বের নানা প্রান্তে যে ভাবে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াতে ফেসবুক উস্কানি দিচ্ছিল, তা তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না।
ফেসবুকের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিথ্যাভাষণ তারা সরাবে না বলেও একবার তুমুল বিতর্কে জড়িয়েছিল এই সংস্থা। ভারতেও কেন্দ্রে শাসক দল বিজেপির সঙ্গে সেখানকার ফেসবুক শাখার আঁতাঁত নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা এ নিয়ে তদন্তও দাবি করেছেন। তবে ফেসবুকের নীতির বিরোধিতা করে কর্মীদের পদত্যাগও নতুন নয়।
আরও পড়ুন: নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন ট্রাম্প
নিজের বক্তব্যের সমর্থনে সাম্প্রতিক কিছু উদাহরণও দেখিয়েছেন অশোক। জানিয়েছেন, কেনোশায় কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জেকব ব্লেককে গুলি করার পরে যে বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী বিক্ষোভ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তার পাল্টা হিসেবে শ্বেতাঙ্গ মিলিশিয়ার হিংসা বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপই করেনি ফেসবুক। উল্টে মিলিশিয়া সদস্যদের ঘৃণা-বার্তা ছড়াতে সাহায্য করেছে। বিক্ষোভে শামিল হতে গিয়ে মিলিশিয়া সদস্যের হাতে খুন হন দুই বিক্ষোভকারী।
অশোকের এই ই-মেল প্রকাশ্যে আশার পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমেছে ফেসবুক। সংস্থার মুখপাত্র লিজ় বুর্জোয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘আমরা কখনও বিদ্বেষ ছড়িয়ে মুনাফা লাভের চেষ্টা করি না। বরং প্রতি বছর আমাদের সংস্থা কয়েকশো কোটি ডলার বিনিয়োগ করে যাতে মানুষ সুরক্ষিত থাকতে পারেন।’’ লিজ়ের আরও দাবি, এখন নানা ভাবে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’-য়ের মাধ্যমে ভুয়ো খবরের প্রচার আটকানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। তা ছাড়া, বিশেষজ্ঞেরাও প্রতিনিয়ত তাঁদের সংস্থার নীতি পুনর্বিবেচনা করে থাকেন বলে জানিয়েছেন লিজ়।