Harsh Vardhan Shringla

একটি নির্দেশে সে দিন প্রাণে বাঁচেন শ্রিংলা

একটি নির্দেশে যে তরুণ কূটনীতিক প্রাণে বেঁচে গেলেন, সেই হর্ষবর্ধন শ্রিংলা কালক্রমে আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত ও পরে দেশের বিদেশসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩ ০৯:৩৬
Share:

ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের কর্তা রাজীব সিংহের মুখোমুখি হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কক বিমানবন্দরের রানওয়ে ছোঁয়ার ঠিক তিন মিনিট আগে বাঁক খেয়ে পাশের জমিতে ছিটকে পড়ল হ্যানয় থেকে ওড়া ভিয়েতনাম এয়ারলাইনসের টিইউ-১৩৪ জেট বিমানটি। ১৯৮৮-র ১০ সেপ্টেম্বরের এই দুর্ঘটনায় যে ৭৫ জন আরোহী মারা যান, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভিয়েতনামে ভারতের রাষ্ট্রদূত অরুণ পট্টবর্ধন, তাঁর স্ত্রী ও কিশোর পুত্র। সঙ্গে আরও এক ডজন ভারতীয়।

Advertisement

সোল অলিম্পিক্সের তোড়জোড় চলছে তখন। ভিয়েতনামে ভারতীয় দূতাবাসের এক নবীন কূটনীতিককে বলা হয়েছিল সে কাজে সাহায্যের জন্য সোলে পৌঁছতে। ব্যাঙ্কক হয়ে সোলে পৌঁছনোর জন্য ওই টিইউ-১৩৪ বিমানে অনেক আগে থেকে টিকিট কাটা ছিল তাঁর, সঙ্গে অতিথি সহোদরও। সফরের আগের রাতে রাষ্ট্রদূত পট্টবর্ধন ওই অফিসারকে ডেকে জানান, তাঁর ছেলে আমেরিকার একটি নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সকালে তিনি সস্ত্রীক ব্যাঙ্কক গিয়ে ছেলেকে আমেরিকার বিমানে তুলে আসবেন। ওই অফিসার যেন একটা দিন পরে সোলে যান।

সেই একটি নির্দেশে যে তরুণ কূটনীতিক প্রাণে বেঁচে গেলেন, সেই হর্ষবর্ধন শ্রিংলা কালক্রমে আমেরিকায় রাষ্ট্রদূত ও পরে দেশের বিদেশসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারত জি২০ সংগঠনের সভাপতি হওয়ার পরে এখন তিনি তার মুখ্য আয়োজক। তাঁর কর্মজীবন নিয়ে একটি বই প্রকাশ উপলক্ষে কলকাতায় ‘মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে সেই দুর্ঘটনার বিষয়টি উত্থাপন করে বণিক সভার কর্তা রাজীব সিংহ সরাসরি শ্রিংলার কাছে জানতে চান— ‘‘ভবিতব্যে বিশ্বাস করেন আপনি?’’

Advertisement

একটু যেন নড়ে যান পোড় খাওয়া কূটনীতিক, দার্জিলিঙের শেরিং-লা পরিবারের সন্তান, ইউপিএসসি-তে পঞ্চদশ স্থান পেয়ে বিদেশ মন্ত্রককে কাজের জন্য বেছে নেওয়া মানুষটি, নেপালি যাঁর মাতৃভাষা হলেও হিন্দি, বাংলা ও ইংরেজিতে সমান সড়গড়। অজানতেই হাত চলে গেল কপালে। একটু ভাবলেন। খানিকটা যেন আনমনে বললেন— ‘‘ভবিতব্য!’’ তার পরে প্রশ্নকর্তার দিকে ঘুরে বললেন, “আমি মানি। জীবনের অভিজ্ঞতায় বারে বারে তার পরিচয় পেয়েছি। ভবিতব্য!”

ভারত জি২০-র সভাপতি হওয়ার পরে দেশের ৫০টি শহরে শিল্প থেকে পর্যটন— মানুষের প্রয়োজনীয় নানা বিষয়ে ১৫৫টির বেশি সম্মেলন এ পর্যন্ত হয়েছে। শ্রিংলা অক্লেশে বলেন, “পাহাড়ি মানুষজনের অতিথিবাৎসল্য সুবিদিত। আমি তাঁদেরই প্রতিনিধি। যুগ যুগ ধরে দেশের দুই আপ্তবাক্য— ‘অতিথিদেবো ভব’ এবং ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ বাস্তবায়নে আমার যথাসাধ্য আমি করছি।” তবে জি২০-কে রাজধানীতে বদ্ধ না-রেখে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাবটি আদতে প্রধানমন্ত্রীর বলে জানালেন তিনি। ঘরোয়া আলোচনায় নরেন্দ্র মোদী তাঁকে বলেছিলেন, “বিদেশে দেশের নাম উজ্জ্বল করার পাশাপাশি আমজনতাও যাতে উপকার পান, সেটা দেখা কর্তব্য।” শ্রিংলা জানান, বহু ছোট ছোট শহরে তাঁরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছেন। কলকাতার পাশাপাশি তাঁর নিজের শহর শিলিগুড়িতেও সম্মেলন হয়েছে পর্যটন নিয়ে।

শ্রিংলা বলেন, তাঁকে নিয়ে লেখা বই যদি এক জন তরুণকেও উজ্জীবিত করে, উদ্দেশ্য সার্থক হবে বলে মনে করেন তিনি। ইংরেজিতে লেখা বইটি তাই হিন্দি, বাংলা ও নেপালি অনুবাদেও পাওয়া যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement