জেরুসালেম প্রশ্নে ট্রাম্প একা, আমেরিকার বিরুদ্ধে ভোট দিল ভারতও

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় যে বিপুল আন্তর্জাতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল, তা থেকে সরে গিয়ে বিশ্বে একঘরে হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয় নয়াদিল্লির পক্ষে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

পাশে নেই অন্য বন্ধুরা। কৌশলগত মিত্র দেশ আমেরিকার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোট দিল ভারতও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঙ্কার দিয়েছিলেন, জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। কিন্তু কার্যত তা অগ্রাহ্য করে ১২৭টি দেশের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করল মোদী সরকার।

Advertisement

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, নয়াদিল্লির এই ‘সাহসী’ পদক্ষেপের ফলে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক চোট খাবে কি? পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠছে যে, কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল ভারত, যা শুধুমাত্র আমেরিকাই নয়, মিত্র দেশ ইজরায়েলকেও অখুশি করবে? কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এ ছাড়া গত্যন্তর ছিল না ভারতের। কারণ একাধিক। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় যে বিপুল আন্তর্জাতিক ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল, তা থেকে সরে গিয়ে বিশ্বে একঘরে হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয় নয়াদিল্লির পক্ষে। যে সব রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে চুক্তিবদ্ধ ভাবে আমেরিকার মিত্র দেশ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন, জার্মানির মতো রাষ্ট্র। অর্থাৎ ভারত তো কোন ছাড় ন্যাটোর সদস্যভুক্ত প্রায় সব রাষ্ট্রই আমেরিকার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভোটমঞ্চে।

আমেরিকার পক্ষে যে মাত্র ৮টি দেশ ভোট দিয়েছে, তারা সরাসরি মার্কিন অনুদানে চলে। যাদের মধ্যে রয়েছে হন্ডুরাস, টোগো, গুয়েতেমালার মতো দেশ। বিশ্বমঞ্চে এ ভাবে একঘরে হয়ে পড়ার পরেও আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছে, জেরুসালেমে তারা দূতাবাস তৈরি করবেই। এবং আমেরিকার কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে আখের গোছানো দেশগুলির বিরোধিতাকে যে আমেরিকা ভাল ভাবে নিচ্ছে না তা-ও খোলাখুলি জানিয়েছে হোয়াইটা হাউস। রাষ্ট্রপু়্ঞ্জের তহবিলের তারাই যে সবচেয়ে বেশি অর্থ জোগায় তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছে ওয়াশিংটন।

Advertisement

তবু জেরুসালেম প্রশ্নে ভারত যে-হেতু এত বড় জাহাজের সঙ্গে রয়েছে, তাই আলাদা করে এই কারণে দ্বিপাক্ষিক স্তরে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে— এমন আশঙ্কা করছে না সাউথ ব্লক।

প্রচ্ছন্ন ভাবে হলেও আরও একটি কারণ কাজ করেছে ভারতের এই ভোটদানের পিছনে। সেটি হল ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। আগামী বছর পাঁচটি রাজ্যে নির্বাচন রয়েছে। কার্যত গোটা বিশ্বের বিপরীতে গিয়ে মুসলিম রাষ্ট্র প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে ভোট দিলে ভুল সংকেত যেতে পারে বলে মনে করছে মোদী সরকার।

বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য এটা আচমকা নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। তাঁর কথায়, ‘‘গত সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনেই আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম।’’ সে সময়েই বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছিলেন, ‘‘ওই অঞ্চলে ভারতের ক্রমর্ধমান সম্পর্ক প্যালেস্তাইনের দাবিদাওয়াকে শক্তিশালী করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ইজরায়েল সফরে গিয়ে ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকেই জোর দিয়েছিলেন। এটা স্পষ্ট যে, ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের মধ্যে নিষ্পত্তির ভিত পারস্পরিক স্বীকৃতির মাধ্যমেই হওয়া উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement