পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়েই ভারতের উপর চাপ বাড়াচ্ছে আমেরিকা

মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে আমেরিকা-পাকিস্তান সখ্য, মনে করছেন কূটনীতির বিশেষজ্ঞরা।

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫০
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

সাউথ ব্লকের বাতাসে একটা রসিকতা ইদানীং ভেসে বেড়াচ্ছে। সেটা কী? পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তেমন নজর কাড়া কিছু করতে পারেননি ইমরান খান। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক সেরে ইসলামাবাদে ফেরার পর তাঁকে দেখাচ্ছে বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের মতো!

Advertisement

এই রসিকতার সঙ্গে মিশে রয়েছে গভীর দুশ্চিন্তাও। মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথমার্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে আমেরিকা-পাকিস্তান সখ্য, মনে করছেন কূটনীতির বিশেষজ্ঞরা। কাশ্মীরে মধ্যস্থতা নিয়ে ট্রাম্পের উপর্যুপরি চাপ তো রয়েছেই। উদ্বেগ আরও বেড়েছে, ইমরানকে করা ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি মন্তব্য থেকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি নাম করে বলেছেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁর সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভারত। সমস্যা মেটানোর জন্য যতটা পারবেন করবেন, এমন কথাও ইমরানকে বলেছেন ট্রাম্প।

প্রকাশ্যেও গত দশ দিনের মধ্যে দু’বার ট্রাম্প বলেছেন, কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতা করতে তিনি উৎসুক। দু’বারই ভারতের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, কাশ্মীর সমস্যায় দ্বিপাক্ষিক সমাধানই একমাত্র পথ। কিন্তু ঘটনা হল, কাশ্মীর নিয়ে এমন অভূতপূর্ব চাপ সাম্প্রতিক অতীতে পশ্চিম বিশ্ব থেকে কখনও দেখা যায়নি। তা হলে এর পরিণতি কী? কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে দুশ্চিন্তা আরও বেশি যে, ইমরানের হাত শক্ত করে ধরে, তবেই কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার কথা তুলছে হোয়াইট হাউস।

Advertisement

বিদেশ মন্ত্রকের একাংশ মনে করছে, গোটা কাশ্মীর প্রসঙ্গটিই এখন বিপজ্জনক এবং স্পর্শকাতর জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রথমত, সুনামির মতো এই মার্কিন চাপের মুখে দাঁড়িয়ে ভারত আর যা-ই করুক, বেশি দিন কাশ্মীর নিয়ে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকতে পারবে না। আজ হোক বা কাল অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের সঙ্গে বসতেই হবে। গত দু’দিন উপত্যকায় যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেওয়ার সঙ্গে ট্রাম্প সরকারের কাশ্মীর নিয়ে প্রবল চাপের কোনও কার্য-কারণ সম্পর্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দক্ষিণপন্থী বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, কাশ্মীরে নতুন করে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে চায় পাকিস্তান। তার পিছনে নির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে। কারণ ভারতের পক্ষ থেকে পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু হলেই তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দ্রুত আলোড়ন তৈরি করবে।

আমেরিকা এই পরিস্থিতির জন্যই অপেক্ষা করছে, এমনটাই কূটনৈতিক সূত্রের খবর। মধ্যস্থতার জন্য যে সওয়াল বারবার করছেন ট্রাম্প, সেই চাপ তখন অনেকটাই বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলিকেও পাশে নেওয়ার চেষ্টা করবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। এই পুরো নকশার পিছনে রয়েছে পাকিস্তানের হাত— এটা ধরে নিয়েই আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করে সীমান্ত-পারের ইন্ধনকে ব্যর্থ করতে চাওয়া হচ্ছে বলেই এই অংশটির মত। পাশাপাশি আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার কী চুক্তি হয়, এবং পাকিস্তান কতটা সহায়তা ওয়াশিংটনকে করতে পারে তার উপরেও অনেকটাই নির্ভর করছে কাশ্মীরের ভবিষ্যত পরিস্থিতি। এক কূটনৈতিক কর্তার মতে, ‘‘ভারত এবং পাকিস্তান যদি দ্বিপাক্ষিক ভাবে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের পথে কিছু দূর এগোতে না পারে, উল্টে উত্তেজনা ও হিংসা বাড়ে, তা হলে তৃতীয় পক্ষের হাত বাড়ানোর মতো ক্ষেত্রটি জোরালো হবে। ট্রাম্পের বারবার করে মধ্যস্থতা করার কথা বলা এ জন্যই খুব অর্থবহ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement