মাসুদ আজহার। ছবি: সংগৃহীত।
জঙ্গি সংগঠনগুলিকে মদতের বিষয়ে বিশ্বমঞ্চে পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দিতে প্রস্তুত ভারত। জঙ্গিনেতা মাসুদ আজহারের সন্ধান পাকিস্তান দিতে না পারলে ভারতই এ বার তাঁর ঠিকানা প্রমাণ-সহ জানিয়ে দেবে। প্যারিসে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর বার্ষিক বৈঠকে এমনটা করার ইঙ্গিত দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সন্ত্রাসে আর্থিক মদতের অভিযোগে এফএটিএফ-র পক্ষে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। এ নিয়ে মার্কিন সরকারের নমনীয় মনোভাবও পরোক্ষে দায়ী বলে মত অনেকের। জঙ্গিদমনের প্রশ্নে ইমরান খান সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে ভারত। তবে কালো তালিকাভুক্ত করা না হলেও ধূসর তালিকা থেকে যাতে পাকিস্তান ছাড় না পায়, সে জন্য এ বার এফএটিএফ-এর বৈঠকে পাক সরকারের আসল চেহারা দেখাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভারত। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা তথা ২০০১-এ ভারতে সংসদ হামলা-সহ গত বছর পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার মূল চক্রী মাসুদের হদিশ না মেলায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা যাচ্ছে না বলে চলতি মাসে দাবি করেছে পাক সরকার। কিন্তু, সেই দাবিকে নস্যাৎ করে ভারতীয় গোয়েন্দাদের পাল্টা দাবি, ইসলামাবাদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরেই রাওয়ালপিণ্ডিতে চকশাহজাদে রয়েছেন মাসুদ ও তাঁর পরিবার। তা-ও আবার পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদতে সুরক্ষিত এক স্থানে। এফএটিএফ-এর বার্ষিক বৈঠকে ফের একই দাবি করলে ভারত প্রমাণ দিয়ে দেখিয়ে দেবে মাসুদ কোথায় রয়েছেন। ভারতের কাছে আরও খবর রয়েছে, ২৬/১১-র হামলার আর এক চক্রী জাকিউর রহমান লকভিকেও বর্মা শহরে সুরক্ষিত আশ্রয়ে রেখেছে আইএসআই। লকভির সন্ধান মিলছে না বলে তাঁর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ করা যাচ্ছে না বলে দাবি ছিল পাক সরকারের। তবে এ সব দাবিকেই ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিতে চায় ভারত। এবং আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি এফএটিএফ-এর প্যারিস প্লেনারিতে সেই কাজটা করতে চায় মোদী সরকার।
প্যারিস প্লেনারির আগেই লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদকে সাড়ে পাঁচ বছরের কারাবাসের শাস্তি শুনিয়েছে লাহৌরের এক সন্ত্রাস বিরোধী আদালত। এই শাস্তির সময় নিয়েও আগেই প্রশ্ন তুলেছে ভারত। সেই সঙ্গে এই শাস্তি আসলে কতটা আন্তরিক, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ভারতের বক্তব্য, এই শাস্তির বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করতে পারবেন হাফিজ সইদ। ফলে ওই সাজা আদৌ কার্যকর হবে কি না, সে বিষয়টিও এফএটিএফ-র কাছে তুলে ধরবে ভারত। সেই সঙ্গে ভারত জানিয়েছে, গত ৫ অগস্ট সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করার পর থেকে মাসুদের ভাই রউফ আজগর উপত্যকায় অন্তত ১০০ জঙ্গিকে ঢুকিয়েছেন। অভিযোগ, তা সত্ত্বেও রউফের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় থেকেছে পাকিস্তান।
আরও পড়ুন: পুলিশি হস্তক্ষেপে মাঝপথ থেকেই ফিরলেন শাহিন বাগের প্রতিবাদীরা
আরও পড়ুন: ‘খুনিদের ক্ষমা করা হবে না’, ট্রাম্পের সফরের আগেই ভিডিয়োতে হুমকি জইশের
জঙ্গিদের আর্থিক মদত বন্ধ না করলে পাকিস্তানকে কালো তালিকাভুক্ত করার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছে এফএটিএফ। তবে এখনও পর্যন্ত তার জন্য এফএটিএফ-র নির্ধারিত ২৭টির মধ্যে মাত্র ১৩টি কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে পাক সরকার। তবে তা সত্ত্বেও কালো তালিকাভুক্ত হওয়া এড়াতে পারে পাকিস্তান। ওই তালিকায় ঢুকলে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার-সহ বহু সংস্থার অর্থসাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে ধাক্কা খাবে পাকিস্তানের আর্থিক সংস্কার। যা নিয়ে সম্প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন সরকার। ফলে শেষমেশ কালো তালিকায় না ঢুকলেও জঙ্গিদমনের প্রশ্নে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে বদ্ধপরিকর ভারত।