নরেন্দ্র মোদী ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র
শান্তি চুক্তির পথে এগোল আমেরিকা ও তালিবান। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ‘হিংসা কমাতে সম্মত হয়েছে’ আমেরিকা, তালিবান এবং আফগান সরকারি বাহিনী। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৯ ফেব্রুয়ারি দোহায় তালিবানের সঙ্গে আমেরিকা শান্তি চুক্তি করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়ো। একই কথা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। এই খবরে সিলমোহর দিয়েছেন তালিবানের মুখপাত্র জাবিউল্লা মুজাহিদও। মার্কিন বাহিনীর সরে যাওয়ার সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন ভারত।
তালিবানের সঙ্গে শান্তি চুক্তির দিন ঘোষণার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন ভারত সফরে আলোচনার টেবিলে সবিস্তার উঠে আসতে চলেছে কাবুল প্রসঙ্গ। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, গোটা বিষয়টির সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া তথা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। তাই ট্রাম্প তথা মার্কিন শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে, পাকিস্তান-তালিবান যোগসূত্র তুলে ধরে ভারতের উদ্বেগ জানানো হবে। এর পরে আমেরিকার কাবুল-নীতি কোন পথে এগোবে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা হবে তা-ও। সে দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা এবং পরিকল্পনাও খুঁটিয়ে জানতে চাইবে নয়াদিল্লি।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, গত দু’দশকে যে বিনিয়োগ এবং পরিকাঠামো সে দেশে করেছে ভারত তার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠল এ বার। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট ভবনটিই শুধু নয়, সালমা বাঁধ পুনর্গঠন, বিভিন্ন স্কুলকে ফের তৈরি করা, কন্দহর ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হাসপাতাল তৈরির মত ৩৬টি বড় প্রকল্প একক ভাবেই করেছে ভারত। নতুন পরিস্থিতিতে এগুলি আর নিরাপদ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি কাবুলে নিজেদের দূতাবাস এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরে সে দেশে পাকিস্তানের প্রভাবই শুধু বাড়বে না, সাউথ ব্লক মনে করছে ওই ফাঁকা পরিসরটিকে কাজে লাগিয়ে লস্কর-ই-তইবা বা জইশ-ই-মহম্মদ-এর মত জঙ্গি সংগঠনগুলির রমরমাও বাড়বে। ভারত বিরোধিতায় তাদের আরও বেশি করে কাজে লাগানোর ছাড়পত্র থাকবে পাকিস্তানের হাতে। আফগানিস্তানে শান্তিরক্ষায় ট্রাম্প ভারতীয় সেনা চাইতে পারেন কি না, তা নিয়ে এ দিন ট্রাম্প প্রশাসনের এক আধিকারিককে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। জবাবে তিনি জানিয়েছেন, শান্তি প্রক্রিয়াকে সফল করতে ভারতের ‘সাহায্য’ চাওয়া হবে।
মার্কিন-তালিবান শান্তিচুক্তির কথা ঘোষণা হওয়ায় অবশ্য খুশি সাধারণ আফগানরা। যেমন কাবুলের ট্যাক্সিচালক হাবিব উল্লাহ। শনিবার তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম সকাল, যখন আমি বোমা বা আত্মঘাতী হামলায় নিহত হওয়ার ভয় ছাড়া আমি বাড়ি থেকে বার হচ্ছি।’’ কন্দহরে শুক্রবার মধ্যরাতেই শুরু হয়ে যায় আনন্দ উৎসব। সেখানে রাস্তায় নাচতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। জলালাবাদে বেরোয় সাইকেল মিছিল। তবে শুক্রবার মধ্যরাতেই বালখ প্রদেশে তালিবান হামলায় নিহত হয়েছেন দুই আফগান সেনা। হামলার খবর মিলেছে মধ্য উরুজ়গান প্রদেশ থেকে। শনিবারই প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে আফগানিস্তানে এক লক্ষের বেশি মানুষ নিহত বা জখম হয়েছেন।