জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভাল বলে দাবি করেছে মার্কিন রিপোর্ট। ফাইল চিত্র।
ভারতে একাধিক মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয় লঙ্ঘন করা হচ্ছে, এমনটাই দাবি করা হয়েছে আমেরিকার বিদেশ দফতরের একটি রিপোর্টে। মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে এই রিপোর্ট। অবশ্য বলা হয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে বিশেষ তকমা তুলে নেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত অবস্থা অনেকটাই ভাল হয়েছে।
‘২০২০ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ নামের এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, অন্তত ১২টি ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে ভারতে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেআইনি ও অযৌক্তিক খুন, থানায় পুলিশের হাতে নৃশংস ও অমানুষিক অত্যাচারের ফলে মৃত্যু, জেলার মধ্যে আধিকারিকদের হাতে অত্যাচার, সরকারি সংস্থার হাতে অযৌক্তিক ভাবে গ্রেফতারি, জেলের ভয়াবহ অবস্থা প্রভৃতি।
মার্কিন এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ভারতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অনেক ক্ষেত্রে খর্ব করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেআইনি ভাবে সাংবাদিকদের গ্রেফতার ও তাঁদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করে সংবাদপত্রের বাক-স্বাধীনতা হরণ করার চেষ্টা হয়েছে।
আমেরিকার বিদেশ দফতর জানিয়েছে, যে সব সংস্থা বা ব্যক্তি সমানাধিকারের জন্য লড়াই করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও অনেক সময় মিথ্যে মামলা করা হয়েছে। কেউ সরকার বিরোধী মন্তব্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ দায়ের করে তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে যা বেআইনি। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করা হয়নি। কোনও ক্ষেত্রে আবার অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখিয়েছে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ ছাড়া ধর্মীয় স্বাধীনতা অনেক ক্ষেত্রে লঙ্ঘন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে এই রিপোর্ট। ভারতে এখনও জোর করে শিশুদের শ্রমিক হিসাবে কাজ করানো কিংবা মহিলাদের উপর জোর খাটানোর মতো সমস্যা রয়েছে বলেও জানিয়েছে এই রিপোর্ট।
অবশ্য জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশংসা করা হয়েছে এই রিপোর্ট। বলা হয়েছে, সরকার ধীরে ধীরে জম্মু-কাশ্মীরের উপর থেকে অনেক বিধিনিষেধ সরিয়েছে। সুরক্ষার কড়াকড়ি কিংবা ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকায় উপত্যকার মানুষদের যে সমস্যা হচ্ছিল তা অনেকটাই লাঘব হয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে জম্মু-কাশ্মীরের একাধিক জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু হলেও এখনও ৪জি পরিষেবা অনেক জায়গাতে শুরু হয়নি। এ ছাড়া রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া ও উপত্যকায় নির্বাচন করানোর মতো পদক্ষেপ করেছে ভারত। জম্মু-কাশ্মীরে এখনও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ও জঙ্গিদের হাতে নিরাপত্তারক্ষী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যুর পরেও যে ভাবে সরকার সেখানে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে তার প্রশংসা করা হয়েছে এই রিপোর্টে।
এর আগেও ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করেছিল আমেরিকা। সেই রিপোর্ট খারিজ করেছিল ভারত। এখন দেখার এই নতুন রিপোর্টের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির কী প্রতিক্রিয়া হয়।