আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মহম্মদ হানিফ আতমার-এর সঙ্গে বৈঠকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: পিটিআই।
নিজেদের বিদেশনীতি বদলে আফগানিস্তানে তালিবানের সঙ্গে গোপনে আলোচনার দরজা খুলেছে ভারত। কূটনীতিকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সাহসী। তবে এতে নির্দিষ্ট কিছু লাভের সম্ভাবনা যেমন আছে, তেমনই ঝুঁকিও কম নয়। নয়াদিল্লি বরাবরই কাবুলকে দেখে ইসলামাবাদের কথা মাথায় রেখে। সাউথ ব্লকের দিক থেকে চেষ্টা করা হয়, যাতে আফগানিস্তানের জাতীয়তাবাদী অংশ মজবুত হয়। যারা পাকিস্তানের নাক গলানো বরদাস্ত করবে না। যে কারণে ‘আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রিত’, ‘আফগানিস্তানের নেতৃত্বে’ শান্তি প্রক্রিয়ার কথাই বলে থাকে নয়াদিল্লি। প্রশ্ন হল, এই পরিপ্রেক্ষিতে সরাসরি তালিবানের সঙ্গে আলোচনা কতটা যুক্তিযুক্ত?
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, তালিবানের একটা বড় অংশই কাবুলে ভারতের উপস্থিতি এবং কাজকে স্বীকৃতি দেয়। তারা প্রাথমিক ভাবে চাইবে না ভারতকে হটাতে। পাশাপাশি এটাও ধর্তব্যের মধ্যে রাখা হচ্ছে যে, আফগানিস্তান থেকে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের উচ্ছেদ করতে তালিবান হয়তো বিশেষ সক্রিয়তা দেখাবে না। কিন্তু তালিবানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গেলে তারা অন্তত এই জঙ্গিদের সহায়তা করা থেকে বিরত থাকতে পারে।
তবে এর ঝুঁকিও রয়েছে। পাকিস্তানের ইন্ধনে যে কোনও মুহূর্তে পিছিয়ে যেতে পারেন তালিব নেতারা। নিশানা করতে পারেন ভারতীয় স্বার্থকে। তালিবানের তরফে যাঁরা আলোচনা চালাচ্ছেন, তাঁদের সরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের মদত পাওয়া হক্কানি গোষ্ঠীর মতো কট্টরপন্থীদের আমদানি করা হতে পারে। এ কথাও খেয়ালে রাখা হচ্ছে যে, বেশির ভাগ তালিবান নেতার পরিবার থাকে পাকিস্তানে। ইসলামাবাদ বরাবরই তালিবানের সঙ্গে দর কষাকষির প্রশ্নে এই বিষয়টিকে কাজে লাগায়। তালিবানের সঙ্গে যে এখনও লস্কর-ই-তইবা, আল কায়দার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগাযোগ রয়েছে, সেটাও প্রমাণিত। ভারতীয় সূত্রের বক্তব্য, তালিবানের সঙ্গে নয়াদিল্লি কথা বলুক বা না-বলুক, এমনিতেও তাদের সঙ্গে পাক মদত পাওয়া জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির যোগাযোগ রয়েছে। ভারত বরাবরই এ নিয়ে উদ্বেগে থাকে। কিন্তু তালিবান-অক্ষ থেকে নিজেদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেললে, পরে তারা ক্ষমতায় এলে ভারতের উদ্বেগ আরও বাড়বে।
ভারতের কৌশলগত বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৯৯ সালের কন্দহর কাণ্ড যে বিরাট লজ্জার মধ্যে ভারতকে ফেলেছিল, তার থেকে এখনও মুক্তি পাওয়া যায়নি। কিন্তু সেই ঘটনার জালে তালিবান-নীতিকে বন্দি করে রাখাটাও কাজের কথা নয়। এটাও বিদেশ মন্ত্রক মনে করে যে, ক্ষমতায় এলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসনিক কারণে ভারতের উপর নির্ভরতা বাড়বে তালিবানের। কারণ পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রের উপর অতিনির্ভরতা, প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষেত্রে আফগানিস্তানকে
যে কোথাও পৌঁছে দেবে না সেটা তারাও জানে।