India

সন্ত্রাস-বিরোধী বৈঠকের আগে নিশানায় পাক-চিন

সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত জোগানে নজরদারি সংস্থা এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি পেয়েছে পাকিস্তান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৫২
Share:

এস জয়শঙ্কর। ফাইল চিত্র।

গোটা বিশ্ব সমস্বরে মুম্বইয়ের ২৬/১১ হামলাকে স্মরণ করে সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হবে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় প্রতীক হিসেবে আবার ফিরে আসবে তাজ হোটেলের বিখ্যাত গম্বুজের পিছনে দাউ দাউ করে জ্বলা আগুন।

Advertisement

আগামী শুক্রবার সেই তাজ হোটেলে হতে চলা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাস-বিরোধী কমিটির বৈঠকের আগে আজ এমনটাই জানাল বিদেশ মন্ত্রক। মন্ত্রকের সচিব সঞ্জয় বর্মার কথায়, “বৈঠক হবে দু’দিন। প্রথম দিন মুম্বইয়ের তাজে। পরের দিন দিল্লিতে। তার পর একটি যৌথ সন্ত্রাস-বিরোধী ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। মুম্বইয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাস-বিরোধী বৈঠকটি আয়োজন করার একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে— জঙ্গিপনার বিরুদ্ধে মুম্বই যেন বাকি বিশ্বের সঙ্গে এক সুরে বেজে ওঠে। ২০০৮ সালে মুম্বইকে হামলার জন্য বিশেষ করে বেছে নেওয়া হয়েছিল, কারণ তা ভারতের বাণিজ্যনগরী। আগামী শুক্রবার সেখানে আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাস-বিরোধী সম্মেলন করাটাই একটা বার্তা।”

পাকিস্তানের নাম করেই ওই সম্মেলনের আগে তোপ দেগেছে বিদেশ মন্ত্রক। সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদত জোগানে নজরদারি সংস্থা এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা থেকে মুক্তি পেয়েছে পাকিস্তান। সে জন্য তাদের গ্রেফতার করতে হয়েছে হাফিজ সইদ, সাজিদ মির-সহ একাধিক লস্কর জঙ্গি নেতাকে। ভারতের অভিযোগ, তা করা হয়েছে শুধুমাত্র এফএটিএফ-এর সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার জন্য। আজ সঞ্জয় বিষয়টির উত্থাপন করে বলেন, “সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক চাপ। সম্প্রতি এফএটিএফ-এর জন্য পাকিস্তান তার মাটিতে জঙ্গি পরিকাঠামোর কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। ২৬/১১-র হামলাকারীদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে তারা। যদিও সেই আইনি ব্যবস্থা কত দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”

Advertisement

শুধু পাকিস্তান নয়, নাম না-করে চিনের দ্বিচারিতা নিয়েও বৈঠকের আগে সরব হতে দেখা গিয়েছে বিদেশ মন্ত্রককে। গত কয়েক মাসে চার বার রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের জঙ্গি তালিকায় পাক সন্ত্রাসবাদীদের অন্তর্ভুক্তি আটকে দিয়েছে বেজিং। ভারত এবং আমেরিকা যৌথ প্রস্তাব করলেও লাভ হয়নি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসাবে ভিটো প্রয়োগ করেছে চিন। আজ ভারতীয় কর্তা বলেন, “আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমনের এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত মন্থর এবং কখনও কখনও তাতে এতটাই দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়, যা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। অনেক বিষয়ের রাজনীতিকরণ হয়, দ্বিচারিতা করা হয়। কিন্তু আদিম যুগ বা মধ্যযুগের সঙ্গে তুলনীয় এই বর্বর সন্ত্রাসবাদকে রুখতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। সন্ত্রাসবাদের কোনও ভাল-মন্দ হয় না। যারা জঙ্গিদের আড়াল করতে চাইছে, তারাও আসলে সন্ত্রাসবাদের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।”

ভারত ধারাবাহিক ভাবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদের জন্য দরবার করে আসছে। বিভিন্ন মঞ্চে সার্বিক ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কারের দাবিও করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চিন একক ভাবে বার বার পাক জঙ্গিদের আড়াল করে যাচ্ছে যে আইনের বলে, তার সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে আজ দাবি তুলেছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তার বক্তব্য, “রাষ্ট্রপুঞ্জের জঙ্গি তালিকাভুক্তির বিষয়টিতে কোনও পক্ষপাতহীন বিচারের সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপুঞ্জের যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা রয়েছে, তা তামাদি হয়ে গিয়েছে। ১৯৪৫ সালের সেই কর্মপদ্ধতি এখনও চলছে। ফলে বর্তমান ভূ-কৌশলগত বাস্তবতা সেখানে প্রতিফলিত হচ্ছে না।”

জানানো হয়েছে, এই বৈঠকটি ভারতে শুরু হয়েই শেষ হয়ে যাবে না। এই কমিটির সদস্যেরা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১৯৩টি দেশে যাবেন। প্রতিটি দেশে এক সপ্তাহ থেকে সেখানকার সরকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে বিশদে সন্ত্রাস পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন এবং বিভিন্ন প্রস্তাব দেবেন। প্রতিটি দেশের থেকে পাওয়া তথ্য জমা দেওয়া হবে নিরাপত্তা পরিষদে। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা কম্বোজ আজ বলেছেন, “দিল্লিতে মূল সম্মেলনটি হবে। আলোচনার মূল থিম, সন্ত্রাসের কাজে নিত্য-নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার রোখা। তিনটি বিষয়ে গোটা সম্মেলনটিকে ভাগ করা হয়েছে। এক, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের প্রসার রোখা। দুই, নতুন অনলাইন প্রযুক্তির সাহায্যে জঙ্গিদের অর্থ জোগানো আটকানো। তিন, ড্রোনের মতো আকাশযান ব্যবহার করে চালানো সন্ত্রাসের বাড়বাড়ন্ত মোকাবিলা করা।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement