শাহবাজ় শরিফ।
তিন দিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীরের সীমানা পুনর্বিন্যাস করার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সংসদে গৃহীত প্রস্তাব নিয়ে নয়াদিল্লিতে ক্ষোভ জানিয়েছে ভারত। শাহবাজ় শরিফের ইনিংস শুরু হওয়ার পরেই এটা স্পষ্ট যে, কাশ্মীরকে আবার যেন তেন প্রকারেণ আলোচনার টেবলে নিয়ে আসতে চাইছে ইসলামাবাদ। আর পাকিস্তান সেই প্রয়াস শুরু করলে ভারত প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য। সেই ধারাবাহিকতা রেখেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের একটি আলোচনাতেও কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের বাগ্যুদ্ধ দেখা গেল। শুক্রবার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী বিলাবল ভুট্টো জ়ারদারি রাষ্ট্রপুঞ্জে ফের জম্মু-কাশ্মীর, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার এবং উপত্যকার সীমান্ত পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত ভারতীয় উদ্যোগ নিয়ে সরব হয়েছেন। পাল্টা তোপ দেগে জানিয়ে ভারত বলেছে, পাকিস্তানের এই আচরণ, ‘পাভলভের’ বিখ্যাত সেই সারমেয়র উপরে করা পরীক্ষায় পাওয়া প্রতিক্রিয়ার মতোই!
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নিয়েই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা দিয়েছিলেন শাহবাজ়। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, নেতৃত্বে যেই থাকুন, ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র বদল হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীর বক্তব্য, “এটি দুঃখজনক, নিজেদের ঘর সামলানোর বদলে পাকিস্তান ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে চলেছে। ভিত্তিহীন এবং উস্কানিমূলক ভারত-বিরোধী প্রচারে তারা লিপ্ত।”
আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের আলোচনায় ভারতীয় স্থায়ী মিশনের কর্তা রাজেশ পরিহারের বক্তব্য আরও তীব্র। বিশেষ করে পাভলভের উদাহরণটি তুলে ধরে ইসলামাবাদকে চতুস্পদের সঙ্গে তুলনা করার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। রাজেশের বক্তব্য, “পাকিস্তানের প্রতিনিধি অনাবশ্যক অবাঞ্ছিত মন্তব্য করেছেন। যার থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটা পাভলভের প্রতিক্রিয়া ছাড়া কিছু নয়। যার উদ্দেশ্য, প্রতিটি মঞ্চকে ব্যবহার করে প্রত্যেকটি বিষয়ে ভুল প্রচার করে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচার চালানো।” তাঁর বক্তব্য, “পাকিস্তান একটাই অবদান রাখতে পারে। সেটা হল তাদের দেশের সহায়তায় যে সন্ত্রাসবাদের পাচার হচ্ছে, তাকে বন্ধ করা। তাদের অন্য সব বক্তব্যগুলির আমরা যোগ্য জবাব দেব।”
আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষা সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি প্রকাশ্য বির্তকসভায় ভারতের পক্ষ থেকে রাজেশ পরিহার ‘রাইট টু রিপ্লাই’-এ এই মন্তব্যগুলি করেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, “জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও ভারতের অখণ্ড এবং অবিচ্ছিন্ন অংশ। পাকিস্তান বেআইনি ভাবে যে ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে, সেটাও আমাদের। কোনও দেশের অপপ্রচার এবং বাগাড়ম্বরে এই সত্য বদলে যাবে না।”
অন্য দিকে, পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী তাঁর প্রথম আমেরিকা সফরে এসেই কাশ্মীর নিয়ে সরব হয়েছেন। নিউ ইয়র্কে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বিলাবল বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়টি অনেকটাই জটিল। প্রথমে ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে ৩৭০ ধারার প্রত্যাহার, তার পরে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমানা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করা, কাশ্মীর নিয়ে তাদের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি জটিলতা আরও বাড়িয়েছে।”