প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বলেছে জার্মানি তাতে স্পষ্ট, চিনের একচেটিয়া আধিপত্যকে খর্ব করার চেষ্টা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। যা ভারতকে নতুন সুযোগ এনে দেবে বলেই আশা নয়াদিল্লির।
প্রতীকী ছবি।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ইউরোপের সঙ্গে ভারতের মতবিরোধের আবহেই জার্মানির সঙ্গে ইন্টার গভর্নমেন্টাল কনসাল্টেশন (আইসিজি) নয়াদিল্লির কাছে মাইলফলক হয়ে উঠতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইউরোপ সফরের মধ্যেই এমন দাবি করছে বিদেশ মন্ত্রক। এক দিকে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে ভারত ও জার্মানির। পাশাপাশি, পাকিস্তানের নাম না করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস এবং ‘সন্ত্রাসের স্বর্গোদ্যানের’ কড়া নিন্দা করেছে দু’দেশ। আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়েও সহমত ভারত এবং জার্মানি।
দ্বিপাক্ষিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘দু’দেশের নেতাই আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের কড়া নিন্দা করেছেন। কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করা হবে না। জঙ্গি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে, জঙ্গিদের স্বর্গোদ্যান ভেঙে দিতে, সন্ত্রাসবাদে পুঁজি জোগানো রুখতে সমস্ত রাষ্ট্রকে আহ্বান করা হচ্ছে।’’ নাম না করে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একচেটিয়া বাণিজ্যিক ও কৌশলগত ভূমিকারও নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় উদ্যোগে শামিল হতে চায়।
এই দীর্ঘ যৌথ বিবৃতিটি নয়াদিল্লির কাছে কূটনৈতিক জয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি যাত্রার আগে মনে করা হয়েছিল, ইউক্রেন নিয়ে মস্কো বিরোধিতার পথে হাঁটার জন্য প্রবল চাপ তৈরি করা হবে ভারতের উপর। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, ইউক্রেনকে পাশে সরিয়ে রেখে মূলত বিনিয়োগ থেকে পরিবেশ, বিকল্প শক্তি, সন্ত্রাস রোধে সহযোগিতা থেকে সমুদ্র বাণিজ্য— বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা হল মোদী এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ়ের।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, এই মুহূর্তে রাশিয়াকে যখন বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞায় ঘিরে ফেলা হচ্ছে, তখন ভারত এবং ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া জার্মানির পক্ষেও লাভজনক। অতিমারি-ধ্বস্ত জার্মানি এত দিন শক্তি এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে মস্কোর উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল ছিল। এখন দেশটির প্রয়োজন নতুন বাজার এবং বিনিয়োগের পরিসর। ভারত এ ক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করতে পারে বলে ধারণা জার্মানির নতুন সরকারের।
যৌথ বিবৃতিতে যে ভাবে ভারতের সঙ্গে গলা মিলিয়ে উদার, স্বাধীন, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা এবং আন্তর্জাতিক আইন মান্য করা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বলেছে জার্মানি তাতে স্পষ্ট, চিনের একচেটিয়া আধিপত্যকে খর্ব করার চেষ্টা ভবিষ্যতেও বজায় থাকবে। যা ভারতকে নতুন সুযোগ এনে দেবে বলেই আশা নয়াদিল্লির।