মাহিন্দা রাজাপক্ষে। —ফাইল চিত্র
ভারত বা চিন, কোনও পক্ষেই ঝুঁকে নেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক নীতি। দু’টি দেশই তার মূল্যবান বন্ধু। সীমান্ত সঙ্ঘাত নিয়ে নয়াদিল্লি ও বেজিংয়ের উত্তেজনার মধ্যেই বার্তা দিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। সেইসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজাপক্ষে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে কলম্বোর সম্পর্ক আশির দশকের আগের মতোই পুরনো খাতে বইছে। ভারত-চিন সঙ্ঘাতের আবহে সুকৌশলে জওহরলাল নেহরু এবং চিনের ঝৌ এন লাইয়ের আমলে তৈরি পঞ্চশীল নীতির কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে সীমান্ত নিয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে টানাপড়েন জারি রয়েছে। পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিয়েছে লাদাখে চিন বিপুল সেনা সমাবেশ করায়। পাল্টা ভারতও লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল বা এলএসি) বরাবর সেনা সংখ্যা বাড়াতে শুরু করেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দুই পরমাণু শক্তিধরের মধ্যে যখন উত্তেজনার পারদ চড়ছে ঠিক তখনই ওই দুই দেশকে নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে দিলেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। সিএএন-নিউজ ১৮-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দ্বীপরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির কথা তুলে ধরেছেন রাজাপক্ষে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্ককে আপনি কী ভাবে দেখেন? জবাবে দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারত ও শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক অনেক চড়াই উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। আশির দশকে এবং ২০১৪-য় সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। এর ভুক্তভোগী দুটি দেশই। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত ভারত শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক দারুণ ছিল। আমার মনে হয়, আমরা ফের সেই যুগে ফিরে গিয়েছি, যখন আমাদের দুটি দেশের মধ্যে শক্তিশালী বন্ধন ছিল। যে সরকারই আসুক না কেন, দু’পক্ষেরই উচিত এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’’
চিনের সঙ্গে দ্বীপরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়েও একই রকম প্রশ্ন করা হয় রাজাপক্ষেকে। তিনি জবাব দেন, ‘‘শ্রীলঙ্কা কারও পক্ষে ঝুঁকে নেই। সব দেশের সঙ্গেই একই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে শ্রীলঙ্কা। ভারত এবং চিন উভয়েই আমাদের মূল্যবান বন্ধু।’’ এর পরই ইতিহাস টেনে এনে বলেন, ‘‘ভারতের জওহরলাল নেহরু এবং চিনের ঝৌ এন লাই প্রত্যেকের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি, অনাক্রম্যতা, অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সাম্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি সম্মান জানিয়ে পঞ্চশীল নীতি তৈরি করেছিলেন। ঠিক এই নীতিগুলিই আমরা নিয়েছি এবং ভবিষ্যতে এগুলি লালন পালন করে চলব।’’
আরও পড়ুন: পরিস্থিতি স্থিতিশীল, আলোচনায় সমাধান সম্ভব, লাদাখ নিয়ে সুর নরম চিনের
এর মধ্যেই অবশ্য বুধবার সুর কিছুটা খাদে নামিয়েছে চিন। র চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিচিয়ান এ দিন বলেন, ‘‘দুই নেতার মধ্যে হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঐকমত্যকে আমরা অনুসরণ করছি এবং দু’দেশের মধ্যে হওয়া সমঝোতাগুলিকে আমরা কঠোর ভাবে পালন করছি।’’ সীমান্তের পরিস্থিতি ‘সামগ্রিক ভাবে স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ বলেও চিনের তরফে এ দিন মন্তব্য করা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূতও কূটনৈতিক সৌজন্যের বার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘...এই দুই দেশ পরস্পরের জন্য অনেক সুযোগ বহন করছে এবং এই দুই দেশ পরস্পরের জন্য বিপজ্জনক নয়।’’
আরও পড়ুন: পুলওয়ামার ধাঁচে হামলার ছক বানচাল, উদ্ধার বিপুল বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি
চিনের মতো নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কেও কালো মেঘ ঘনিয়ে উঠেছে। চলতি সপ্তাহেই সপ্তাহে সীমান্তের তিনটি এলাকা লিম্পিয়াধুরা, লিপুলেখ ও কালাপানিকে নেপালের বলে দাবি করে বসেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। ওই তিনটি এলাকা ভারতীয় ভূখণ্ডে বলে জানিয়ে দিযেছে নয়াদিল্লি।