অধ্যাপক লিন অ্যাটওয়াটার। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
সূত্রপাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সেই ‘#মিটু’ আন্দোলন যেন ঝড়ের মতো বয়ে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া জুড়ে। ফ্যাশন, সিনেমা জগৎ থেকে শুরু করে কর্পোরেট দুনিয়া— প্রায় সমস্ত ক্ষেত্র থেকেই একের পর এক অভিযোগ উঠে এসেছিল। কিন্তু, সেই আন্দোলনের দু’বছর পর, তা নিয়ে আশঙ্কার কথাই শোনাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাঁদের দাবি, #মিটু আন্দোলনের জেরে ‘আকর্ষণীয়’ মহিলাদের চাকরিতে নিয়োগ করার প্রবণতা কমছে সে দেশে।
সোশাল মিডিয়ায় শুরু হওয়া একটি আন্দোলন জোরালো প্রভাব ফেলেছিল বাস্তব জীবনে। সেই আন্দোলন কতটা আলোড়ন তুলেছিল সমাজে? তা খতিয়ে দেখতেই ২০১৮ সালের প্রথম থেকেই সমীক্ষা শুরু করেছিলেন হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিন অ্যাটওয়াটার ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, ‘#মিটু’ আন্দোলন মহিলাদের কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করলেও আসলে কর্মক্ষেত্রে তার ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ পড়েছে। সেই আশঙ্কা থেকেই গবেষণা শুরু করেন অধ্যাপক লিন ও তাঁর সহযোগীরা। ‘যৌন হেনস্থা কী ভাবে ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করছে’— এই বিষয় নিয়েই গবেষণা চালান তাঁরা। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে তার রিপোর্ট।
পুরুষ ও মহিলাদের উপর আলাদা আলাদা করে মোট দু’টি সমীক্ষা চালানো হয়। শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত ১৫২ জন পুরুষ ও ৩০৩ জন মহিলার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই সমীক্ষায় অবশ্য কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি। আর তাতেই মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। লিনের দাবি অনুযায়ী, সমীক্ষায় ১৯ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ‘আকর্ষণীয়’ মহিলাদের নিয়োগ করতে চান না। আরও এক ধাপ এগিয়ে, ২১ শতাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ থাকে এমন কাজের ব্যাপারে তাঁরা মহিলাদের নিয়োগ করতে চান না। ২৭ শতাংশ পুরুষ মহিলাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারও এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: দেশে মন্দা চলছে, ৫ শতাংশ জিডিপি অপ্রত্যাশিত, বললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর
যৌন হেনস্থা নিয়ে কি পুরুষ ও মহিলা, ভাবনা দু’রকম? সমীক্ষার মাধ্যমে তার হদিশ পাওয়ারও চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। এ নিয়ে ভিন্ন তথ্যই তুলে ধরেছেন অধ্যাপক নিল অ্যাটওয়াটার। তিনি বলেন, ‘‘বেশির ভাগ পুরুষই জানে, যৌন হেনস্থা কী এবং বেশির ভাগ মহিলাও জানে এটা কী। পুরুষেরা তাদের নিজেদের ব্যবহার সম্পর্কে জানে না, আর মহিলারা তিলকে তাল করছে এই ধারণা পুরোপুরি মিথ্যা। বরং, হেনস্থা সম্পর্কে মহিলারা অনেক নরম মনোভাব পোষণ করে।’’
গবেষকদের মতে, এই সমীক্ষার ফলাফল আশাব্যাঞ্জক নয়। সমীক্ষায় কর্পোরেট জগতে ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ ও ‘লিঙ্গ ভিত্তিক বেতন বৈষম্য’ নিয়েও আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচানো ও কর্মীদের চরিত্র গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে ওই সমীক্ষায়।
আরও পড়ুন: বুধবার মোদী-মমতা বৈঠক দিল্লিতে, কালই রাজধানী যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী