কোভিড মানচিত্রে অন্যতম বিরল দেশ ভুটান। ফাইল ছবি
ভারতে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তানেরও অবস্থা একই রকম। কিন্তু কোভিড মানচিত্রে অন্যতম বিরল দেশ ভুটান। সেখানে এখনও মৃতের সংখ্যা ১।
কোভিড সংক্রমণ শুরুর সময়ে রাজধানী থিম্পুর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত এক যুবকের একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু হয়। তার পর থেকে এ দেশে এক জনেরও করোনায় মৃত্যু হয়নি। দৈনিক সংক্রমণও আছে নিয়ন্ত্রণে। ভারতে যেখানে দৈনিক ৪ লক্ষের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, সেখানে ভুটানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১১। শুধু ভুটান নয়, পৃথিবীর একাধিক দেশ— ভিয়েতনাম, রাওয়ান্ডা, সেনেগাল— অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে করোনা সংক্রমণকে।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, জনস্বাস্থ্যে বিশেষ জোর দেওয়ার কারণেই এই দেশগুলিতে করোনা তেমন করে কামড় বসাতে পারেনি। ভুটানে রয়েছেন মোট ৩৩৭ জন চিকিৎসক, ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। তা-ও লড়াইয়ে প্রায় জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে ভুটান। কারণ প্রশাসনিক পরিকল্পনা। ২০১৯-এর ৩১ ডিসেম্বর চিনে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ভুটান করোনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে ২০২০-র ১৫ জানুয়ারি থেকে। শুরু হয় লক্ষণের ভিত্তিতে পরীক্ষা। মার্চ মাসের ৬ তারিখে ভুটানে প্রথম আক্রান্তের খবর মেলে। তার ৬ ঘণ্টা ১৮ মিনিটের মধ্যে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ৩০০ জনকে চিহ্নিত করে পরীক্ষা শুরু হয়। পাঠানা হয় নিভৃতবাসে। এমন পরিকল্পনাই অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে এই ছোট্ট দেশকে।
দেশের প্রধান অর্থনীতি পর্যটন হওয়া সত্ত্বেও গত বছরের মার্চ থেকে কড়া হাতে বিদেশিদের আগমন বন্ধ করে ভুটান। প্রায় সমস্ত জিম, রেস্তরাঁ, শপিং মল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারে করা হয় কড়াকড়ি। যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছিলেন, তাঁদের জন্য সরকারি খরচে থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই যাতে সঙ্গে সঙ্গে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারে যাওয়া যায়, তার ব্যবস্থাও করা হয়। ভুটানে চালু করা হয় ১৪ থেকে ২১ দিনের কোয়রান্টিনে থাকার নিয়ম। যাতে সামান্যতম সংক্রমণেরও সম্ভাবনা না থাকে। বিপুল হারে পরীক্ষা শুরু করে ভুটান।
করোনা কালে যাঁদের উপার্জন কমেছে, তাঁদের ভিটামিন ট্যাবলেট-সহ ওষুধ, খাবার, পাঠানো থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যবস্থা করা হয় ভুটানে। শুরু থেকেই প্রশাসন কড়া হাতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করায় এখনও করোনা থেকে অনেকটাই মুক্ত ভারতের এই প্রতিবেশী দেশ।