জনসমুদ্র: করাচির সভায় ইমরান খানের সমর্থকেরা। (ইনসেটে) বক্তৃতা দিচ্ছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই
কয়েক দিন আগে পর্যন্ত তাঁকে গদিচ্যুত করার জন্য সরাসরি আমেরিকাকে দুষেছিলেন তিনি। অভিযোগ করেছিলেন, আমেরিকান প্রশাসনের সঙ্গে হাত মিলিয়েই দেশের বিরোধী জোট তাঁকে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছে। তবে এ বার পুরোপুরি উল্টো সুর শোনা গেল পাকিস্তানের সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গলায়।
গত কাল করাচি শহরের বাগ-ই-জিন্নায় বিশাল জনসভার আয়োজন করেছিল ইমরানে দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। উপচে পড় ভিড় হয়েছিল সেই সভায়। সেখানেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে ইমরানের মুখে উঠে এসেছে ভারত, আমেরিকা আর ইউরোপের প্রসঙ্গ। ইমরান জানিয়েছেন, তিনি কোনও নির্দিষ্ট দেশের বিরোধী নন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কোনও দেশের বিরোধী নই। না আমি ভারত বা ইউরোপের বিরোধী, না আমি আমেরিকার বিরোধী। আমি মানবতার সঙ্গে আছি। কোনও সম্প্রদায়েরও বিরোধী আমি নই।’’
আচমকা ইমরানের মুখে এই কথা শুনে খানিকটা বিস্মিতই রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর থেকেই বিদেশি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আউড়ে গিয়েছেন ইমরান। তাঁকে সরানোর জন্য সরাসরি আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তাঁর দল পিটিআইয়ের সমর্থকেরাও সম্প্রতি দেশ জুড়ে অসংখ্য মিছিলে আমেরিকাকে একহাত নিয়েছেন।
শুধু তা-ই নয়। কিছু দিন আগে পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও তুমুল সমালোচনা করেছিলেন ইমরান। সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় পাকিস্তানকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার বার্তা দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তখনই ইমরান বলেছিলেন যে তাঁরা কোনও দেশের দাস নন। বস্তুত, পশ্চিমি দেশগুলির প্রভাবমুক্ত বিদেশ নীতির পক্ষেও দীর্ঘদিন ধরে সওয়াল করে আসছেন তিনি।
একদা ভারত-বিরোধী অবস্থান নেওয়া ইমরান আস্থা ভোটের আগের দিন থেকেই আচমকা ভারতের প্রশংসা শুরু করেন। বলেন, ভারতীয়দের মতো আত্মসম্মান আর কারও নেই। নিজের দেশের সেনা বাহিনীকে কটাক্ষ করে ভারতের নিরপেক্ষ বিদেশ নীতিরও তুমুল প্রশংসা করেছিলেন তখন। তাঁর এই আচমকা সুর বদলে বিস্ময় প্রকাশ করেছে কূটনৈতিক মহলও।
করাচিতে গত কালের জনসভায় ইমরানের দলের বাকি নেতারা নিজেদের বক্তৃতায় পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন। ওই সভায় অংশ নিয়েছিল পিটিআইয়ের জোট শরিক আওয়ামি মুসলিম লিগও। সেই দলের প্রধান শেখ রশিদ করাচির জনতাকে কুর্নিশ করেছেন। জানিয়েছেন, ইমরান খানের জন্য করাচির মানুষ ফতিমা জিন্নার রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন।