আমেরিকায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দলের প্রতীক ‘গাধা’ এবং ‘হাতি’। ছবি: সংগৃহীত।
মঙ্গলবার আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সে জন্য অবশ্য এক সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে আগাম ভোটপর্ব। শুক্রবার পর্যন্ত সে দেশের প্রায় ছ’কোটি ভোটদাতা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। ‘গাধা’ এবং ‘হাতি’ চিহ্নে ভোট দিয়েছেন পছন্দের নেতাকে। কিন্তু কী ভাবে এল এই দুই চিহ্ন? নিরীহ দুই প্রাণী কী ভাবে হয়ে উঠল আমেরিকার দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রতীক? ফিরে দেখা যাক সেই ইতিহাস।
নির্বাচনী প্রচারের সব পর্বেই নিজস্ব চিহ্ন ব্যবহার করে আমেরিকার দুই দল। ডেমোক্র্যাটদের প্রতীক গাধা, আর রিপাবলিকানদের হাতি। ইতিহাস বলছে, ১৯ শতকের শেষের দিকে বিখ্যাত কার্টুনশিল্পী টমাস নাস্ট একটি রাজনৈতিক কার্টুনে আমেরিকার দুই প্রধান দলকে বোঝাতে এঁকেছিলেন ‘গাধা’ এবং ‘হাতি’। সেই থেকেই সমানে চলে আসছে সেই ‘ট্র্যাডিশন’।
স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজ়িনের মতে, সে সময় রাজনৈতিক কার্টুনগুলি সমাজ এবং মানুষের মননকে এতটাই প্রভাবিত করত, যে ওই ‘গাধা’ এবং ‘হাতি’ চিহ্নই সর্বসম্মতিতে স্বীকৃতি পায়। সে সময় কার্টুন ছিল শিল্পের পাশাপাশি রাজনৈতিক গূঢ় তত্ত্বকে সরল, প্রাঞ্জল আকারে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক মাধ্যম। টমাস নিজে রিপাবলিকান দলের সমর্থক ছিলেন। আব্রাহাম লিঙ্কনেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। সেই টমাসই ১৯৭০ সালে ‘হার্পার্স উইকলি’ নামে এক সাপ্তাহিক ম্যাগাজ়িনে একটি কার্টুন এঁকেছিলেন। তাতে একটি মৃত সিংহকে লাথি মারছিল একটি গাধা। ওই ‘গাধা’ ছিল আদতে ডেমোক্র্যাট দলের প্রতীক। অন্য দিকে ‘সিংহ’-এর মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছিল লিঙ্কনের সদ্যমৃত যুদ্ধ সংক্রান্ত সচিব এডউইন স্ট্যান্টনের দিকে। ডেমোক্র্যাট দলের প্রতি কটাক্ষ করেই তাদের প্রতীক হিসাবে ‘গাধা’কে ব্যবহার করেছিলেন টমাস। কিন্তু সেই চিত্রায়ণই পরে ডেমোক্র্যাট দলের নির্বাচনী চিহ্ন হিসাবে স্বীকৃতি পায়।
‘হার্পার্স উইকলি’তে প্রকাশিত সেই কার্টুন। ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স।
অন্য দিকে, রিপাবলিকানদের প্রতীক হিসাবে টমাসের কার্টুনে বার বার ব্যবহৃত হয়েছে ‘হাতি’র উপমা। সিএনএন-এর ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৮৭৪ সালে ভোটের আগে ‘নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড’ পত্রিকায় একটি কার্টুন প্রকাশিত হয়। সেই কার্টুনেও রিপাবলিকানদের বোঝাতে হাতিকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে চিহ্নের ধরনও। ‘হাতি’ কিংবা ‘গাধা’, দুইয়ের ছবিতেই এসেছে বদল। প্রাণীর ছবির বদলে এসেছে রেখাচিত্র, নরম হয়েছে মুখের উগ্র, আক্রমণাত্মক ভাব। স্মিথসোনিয়ান আমেরিকান হিস্ট্রি মিউজ়িয়ামের তত্ত্বাবধায়ক লিসা ক্যাথলিন গ্র্যাডির মতে, সম্ভবত আমেরিকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়েই এই বদল। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে কখনও আমেরিকায় উগ্র রাজনৈতিক মেরুকরণের সঙ্গে পাল্লা দিতে ফের হয়তো বদল আসতে পারে চিহ্নে!
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবারই আমেরিকায় নির্বাচন। আমেরিকায় ভোট দেওয়ার যোগ্য নাগরিকের সংখ্যা ২৩ কোটির বেশি। এ বারের নির্বাচনে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। ২০২৪ সালের ভোটে আমেরিকার ৫০টি প্রদেশের মধ্যে ‘নির্ণায়ক’ ছ’টি প্রদেশে ডেমোক্র্যাট নেত্রী কমলা হ্যারিস এগিয়ে রয়েছেন বলে দাবি নানা মহলের। অন্য দিকে, পিছিয়ে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী তথা রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পও। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট নেত্রী কমলা আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট। ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হওয়ারও নজির গড়বেন তিনি।