ভারতীয় সংস্কৃতির রঙিন ঝলক, দর্শকদের নতমস্তকে নরেন্দ্র মোদীর অভিবাদন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাত রাখা, করমর্দনের পর উষ্ণ আলিঙ্গন। ‘হাউডি মোদী’-তে এ সবেরই সাক্ষী থাকল হিউস্টন। সেই অনুষ্ঠান কি ছাপ ফেলল আন্তর্জাতিক মহলে? ‘হাউডি মোদী’ ঘিরে মোদী বিরোধীরা কী বললেন? বিদেশি সংবাদমাধ্যমেই বা কী শোনা যাচ্ছে?
‘হাউডি মোদী’ অনুষ্ঠান ঘিরে প্রবল উৎসাহ ছিল অনাবাসী ভারতীয়দের মধ্যে। হিউস্টনের এনআরজি ফুটবল স্টেডিয়ামের ৫০ হাজার আসনের একটাও খালি পড়ে ছিল না। মোদী-সমর্থকদের ভিড়, ইন্দো-আমেরিকানদের উদ্দীপনা, ফেস্টুন-ব্যানার-তেরঙ্গা, সবই চোখে পড়ল হিউস্টনে।
হিউস্টন শহরের মেয়র সিলভেস্টার টার্নার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুষ্ঠানে স্বাগত জানিয়ে তাঁর হাতে তুলে দিলেন শহরের চাবি।
হিউস্টনের ফুটবল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চ মাতালেন অনাবাসী ভারতীয় শিল্পীরা। ভারতীয় সংস্ক়ৃতির নানা দিক তুলে ধরলেন তাঁদের নৃত্যের মাধ্যমে।
ভারতীয় ‘বন্ধু’র হাতে হাত রেখে এ ভাবেই দেখা গেল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। হিউস্টনে রওনা হওয়ার আগেই ট্রাম্প টুইট করে বলেছিলেন, ‘‘বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। টেক্সাসে দিনটা ভালই কাটবে।’’ জবাবে মোদী লেখেন, ‘‘নিশ্চয়ই। আপনার সঙ্গে শীঘ্রই দেখা হবে।’’ এনআরজি স্টেডিয়ামে দুই ‘বন্ধু’ই একে অপরকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন।
২০১৪-তে প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর নিউ ইয়র্কে অনাবাসী ভারতীয়দের জমায়েতে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সে বার ম্যাডিসন স্কোয়্যার গার্ডেন ২০ হাজার দর্শকের মাঝে বিজয়ের সমারোহ ছিল। তবে এ বার আরও বেশি সংখ্যক দর্শকের মাঝে মার্কিন ‘বন্ধু’র হয়ে নিজের ভাষণে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে যেন নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিলেন মোদী।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে হিউস্টনের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী রব তুললেন, ‘অব কি বার, ট্রাম্প সরকার’। যা শুনে মোদীর দিকে সমালোচনার তির ছুড়েছেন বিরোধীরা।
কংগ্রেসের দাবি, ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে সক্রিয় ভাবে ভোটপ্রচার করছেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা টুইটারে বলেন, ‘আপনাকে মনে করিয়ে দিই, আমেরিকাতে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গিয়েছেন, মার্কিন নির্বাচনের তারকা প্রচারক হিসাবে নয়।’
নরেন্দ্র মোদীর ‘উদারতা’য় ডোনাল্ড ট্রাম্প মুগ্ধ হলেও সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেছেন, ‘‘মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার, ট্রাম্পের হয়ে আপনার সক্রিয় প্রচার ভারত ও আমেরিকা, দু’দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ণ করেছে।’’ তাঁর মতে, অন্য দেশের ভোটে নাক গলিয়ে বিদেশনীতির মর্যাদা নষ্ট করেছেন মোদী।
বিদেশি সংবাদমাধ্যমে মোদীর এই সভা নিয়ে শোরগোল হলেও দেশীয় নেতাদের সমালোচনার পাল্টা জবাব দিতে অবশ্য ছাড়েনি নরেন্দ্র মোদীর দল বিজেপি। কংগ্রেসের সমালোচনার জবাবে বিজেপির তথ্য ও প্রযুক্তি সেল-এর দায়িত্বে থাকা অমিত মালব্য টুইট করে বলেছেন, ‘আমেরিকার ভোটে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করছেন, এই অভিযোগ একেবারেই ভ্রান্ত।’
শুধু ঘরের মাঠেই নয়, ‘হাউডি মোদী’ ঘিরে বিদেশেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। খোদ মার্কিন মুলুকের সংবাদমাধ্যমের একাংশ সরব হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। মোদীর তালেই তাল মিলিয়েছেন ট্রাম্প, তবে তাঁর পরিচিত সুরে, এমনটাই মত নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো পত্রিকা।
ওয়াশিংটন পোস্ট-এর মতে, হিউস্টনের সভায় নরেন্দ্র মোদীর হয়ে জমি তৈরি করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে শুধুমাত্র মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একাংশই নয়। ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমও এই মেগা ইভেন্টকে গুরুত্ব সহকারে বর্ণনা করা হয়েছে। বিবিসি এই সভাকে ‘ঐতিহাসিক’ অ্যাখ্যা দিয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, হিউস্টনের সভায় দুই রাষ্ট্রনেতার যৌথ উপস্থিতি আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, এতে এশীয়-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের আধিপত্যের উচ্চাশায় ধাক্কা লাগতে পারে।
দেশের বেহাল অর্থনৈতিক বা গণতন্ত্রের অবক্ষয় নিয়ে সমালোচনায় বিরোধীরা সরব হলেও কাশ্মীর প্রসঙ্গে বিজেপি সরকারের হয়ে ব্যাট ধরলেন মোদী। সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরবও হলেন। অন্য দিকে, হিউস্টনের সভায় ইন্দো-মার্কিন ভোটারদের মন জয় করতেও চাইলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘হাউডি মোদী’ ঘিরে শুধুমাত্র প্রশংসা নয়, বিক্ষোভও দেখা গেল আমেরিকায়। হিন্দু কট্টরপন্থীদের বিরুদ্ধে ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে মোদী বিরোধিতায় পথে নামলেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষজন। #আদিওসমোদী নামে টুইটারে সরবও হলেন তাঁরা। ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর উপস্থিতিকে দুই কট্টরপন্থীর সাক্ষাৎ-ও বলে টুইট করেন এক নেটিজেন।