হাউস অব কমন্সে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।—ছবি রয়টার্স।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রস্তাব মেনে আগামী ১২ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে সম্মতি দিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স। প্রায় একশো বছর পরে বড়দিনের ছুটিতে ভোট হবে এ দেশে।
নির্বাচন কবে হবে, সেই নিয়ে কাল রাতে ভোটাভুটি হয় হাউস অব কমন্সে। প্রধানমন্ত্রী জনসনের ১২ ডিসেম্বর ভোট করানোর প্রস্তাব প্রায় সর্বসম্মত ভাবে মেনে নেন এমপিরা। বরিসের বিরুদ্ধে মাত্র ২০টি ভোট পড়েছিল। লেবার পার্টি আগেই বলে দিয়েছিল, বরিসের প্রস্তাবকে সমর্থন জানাবে তারা। সমর্থনের আশ্বাস এসেছিল স্কটল্যান্ডের এসএনপি থেকেও। ফলে স্থানীয় সময় রাত আটটার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বরিসের প্রস্তাব সহজেই মেনে নেবেন এমপি-রা। সেই প্রস্তাব এ বার পাঠানো হবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে। সেখানেও বিনা বাধায় এই প্রস্তাব পাশ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকেরা।
এর আগে ২০১৭-র জুন মাসে ভোট হয়েছিল ব্রিটেনে। সেই ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন কনজ়ারভেটিভ নেত্রী টেরেসা মে। কিন্তু তার পরে গত দু’বছরে দলের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে মাত্র ২৯৮টি এখন কনজ়ারভেটিভদের দখলে। ফলে পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশ করাতে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে দলীয় নেতৃত্বকে।
টেরেসা মে ইস্তফা দেওয়ার পরে বরিস জনসন ক্ষমতায় এসেও এই ব্রেক্সিট জট কাটাতে পারেননি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ফের ব্রেক্সিট পিছনোয় সম্মতি দেওয়ার পরে তেড়ে-ফুঁড়ে নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। একটাই লক্ষ— নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পার্লামেন্ট দখল করে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশ করিয়ে নেওয়া।
ব্রিটেনে সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ভোট হয়। এর আগে ডিসেম্বর মাসে ভোট হয়েছিল ৯৬ বছর আগে, সেই ১৯২৩ সালে। ছুটির মরসুমে ভোট হবে জেনে মুষড়ে পড়েছেন ব্রিটেনের সাধারণ মানুষ। অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন, গত বারের মতো ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট হলে কী হবে! কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-পেলে সব থেকে বেশি আসন যারা পায়, তারা ১৪ দিন সময় পায় অন্যান্য দলের সমর্থন জোগাড় করে জোট সরকার গঠন করার জন্য। সেই পরিস্থিতি তৈরি হলে কি বড়দিনেই শপথ নেবে নতুন সরকার? স্কুলের হল এবং গির্জায় সাধারণত নির্বাচনী বুথ করা হয়। কিন্তু বড়দিনের সময়ে স্কুলে-স্কুলে, গির্জায়-গির্জায় বিভিন্ন নাটক ও সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নির্বাচনের হিড়িকে সেই সবে কোপ পড়তে পারে বলে চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ ব্রিটিশবাসী।
১২ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ায় খুশি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘গোটা দেশ এক হয়ে ব্রেক্সিট স্বপ্ন সফল করার সময় এসেছে।’’ তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যে খুব সহজ হবে না, তা মেনে নিয়েছেন বরিস। তাঁর কথায়, ‘‘এই নির্বাচনে যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। আমরা দেশের স্বার্থরক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করব।’’ আর আজই একটি জাতীয় দৈনিকে এক নিবন্ধে বিরোধী দলনেতা করবিন লিখেছেন, ‘‘দেশকে পাল্টে দেওয়ার এ রকম একটা সুযোগ কোনও প্রজন্মের কাছে এক বারই আসে। প্রকৃত পরিবর্তনের জন্য আমরা জান লড়িয়ে প্রচার করব।’’ তাঁর দলের ঘোষিত নীতি, ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলে ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিতীয় গণভোট করবেন তাঁরা। যাতে ‘না’ বলার সুযোগ পান ব্রিটেনের নাগরিকরা।