১৯৪০ সাল নাগাদ ব্রিটিশ আধিপত্যে থাকা চ্যানেল আইল্যান্ডের কিছুটা অংশ দখল করে নিয়েছিল জার্মান সেনা।
চ্যানেল আইল্যান্ডের অ্যালডার্নিতে মূলত আধিপত্য স্থাপন করে জার্মান সেনা। ব্রিটিশদের এলাকা দখলের পরই শুরু হয়েছিল নির্মম অত্যাচার। কতটা নির্মম ছিল সেই বন্দিজীবন, তা এত দিন অজানাই থেকে গিয়েছিল।
সম্প্রতি অ্যান্টিকুইটি নামে এক জার্নালে একটি গবেষণামূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে সারা বিশ্বে এই জায়গার ঐতিহাসিক তাত্পর্য গুরুত্ব পাবে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ওই গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ রাজত্ব ছিল এই দ্বীপে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আ্যালডার্নি জার্মান সেনার দখলে চলে যায়।
জার্মান সেনা দখল নিতে চলেছে আঁচ করে আগেই অবশ্য ব্রিটিশ বাহিনী এই দ্বীপের বাসিন্দাদের নৌকা করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। সে সময় এই দ্বীপে দেড় হাজারের মতো বাসিন্দা ছিলেন।
জার্মান সেনা যখন এই দ্বীপে এসে পৌঁছয়, দ্বীপটা পুরোপুরি ফাঁকা ছিল। ১৯৪২ সাল নাগাদ তাঁরা এই দ্বীপে চারটি শিবির বানায়। তার মধ্যে দুটো ছিল ওয়ার্ক ক্যাম্প এবং দুটো ছিল কনসেনট্রেশন ক্যাম্প।
ছোট ছোট ঘুপচি ঘর আর গাদাগাদি করে থাকা বন্দিরা। বন্দিদের এ ভাবেই এই ঘরগুলোতে রাখত জার্মান সেনা।
ক্যারোলিন স্টার্ডি কোলস নামে এক ইতিহাসবিদ জানিয়েছেন, এই দ্বীপ যে জার্মান সেনার দখলে চলে গিয়েছিল, তা জানা ছিল। কিন্তু এই দ্বীপে বন্দিদের উপর যে এতটা নির্মম অত্যাচার চলত, তা এই গবেষণার আগে পর্যন্ত কেউ জানতে পারেননি।
কতটা নির্মম ভাবে রাখা হত বন্দিদের? গবেষকরা জানাচ্ছেন, বন্দিদের জন্য খুব ছোট ঘর বরাদ্দ ছিল। তাতে শুধু একটাই দরজা ছিল। দরজা এতটাই নিচু ছিল যে, ঘর থেকে বার হতে গেলে মাথা হেঁট করে আসতে হত।
ঘরে কোনও জানলা ছিল না। ঘরের সঙ্গেই ছিল ছোট শৌচাগার। ওই ছোট ঘরেতেই প্রায় ৭০০ বন্দিদের রাখা হয়েছিল।
প্রত্যেকের জন্য মাত্র দেড় ফুট জায়গা বরাদ্দ ছিল। তার উপর স্যাঁতসেতে পরিবেশ। গবেষকরা জানাচ্ছেন, অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার ফলেই যে কোনও রোগ খুব দ্রুত সকলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ত এখানে।
তার উপরে ইঁদুর, উকুন, মাছির উৎপাতও ছিল মারাত্মক। তার ফলে এক বার যেমন টাইফাসের হানায় একসঙ্গে প্রায় দুশো বন্দির মৃত্যু হয়েছিল।
আরও একটা বিষয় অবাক করেছে গবেষকদের। বন্দিদের এই ঘরের সঙ্গে লম্বা সুড়ঙ্গের যোগ।
গবেষকদের ধারণা, এই সুড়ঙ্গের মধ্যে দিয়েই মহিলা বন্দিদের যৌনপল্লিতে নিয়ে যাওয়া হত।