বালুচিস্তানের ছোট্ট একটি গ্রামের এক হিন্দু মন্দিরের দরজা বন্যবিধ্বস্তদের জন্য খুলে দেওয়া হল।
বন্যায় বিপর্যস্ত পাকিস্তানের বহু এলাকা। এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জন। ঘর ছাড়া লাখ লাখ মানুষ। এর মধ্যেই বালুচিস্তানের ছোট্ট একটি গ্রামের এক হিন্দু মন্দিরের দরজা বন্যবিধ্বস্তদের জন্য খুলে দেওয়া হল। আশ্রয় নিলেন ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই মুসলিম।
কাছি জেলার জালাল খান গ্রামে রয়েছে মাধোদাস মন্দির। একটু উচু জায়গায় তৈরি এই মন্দিরই এখন আশ্রয়শিবিরে পরিণত হয়েছে। গ্রামটি ঘিরে রয়েছে নারী, বোলান আর লেহরি নদী। সেই নদীগুলিতে প্লাবন আসার ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। এখানকার বাসিন্দারা চাইলেও জেলার অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিতে পারছেন না। ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত। এই পরিস্থিতিতে মসিহা হয়ে এসেছে বাবা মাধোদাস মন্দির।
দেশভাগের অনেক আগের কথা। শোনা যায়, তখন এই গ্রামে প্রায়ই উটে চেপে আসতেন হিন্দু সাধু বাবা মাধোদাস। গ্রামের বাসিন্দা ইলতাম বুজদার জানিয়েছেন, জাত-ধর্মের আগে তাঁর কাছে গুরুত্ব পেত মানবিকতা। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বালুচিস্তানের বহু মানুষ তাঁর ভক্ত ছিলেন। এখনও এই মন্দির দর্শন করতে আসেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের থাকার জন্যই মন্দির চত্বরে রয়েছে ১০০টি ঘর।
ভাগনারি তহশিলের এক দোকানদার রত্তন কুমার এখন এই মন্দিরের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মন্দিরের আশপাশে বহু ঘরই বন্যায় ধ্বংস হয়েছে। যে ক’টি বেঁচে রয়েছে, সেগুলিতেই আশ্রয় নিয়েছেন ২০০ থেকে ৩০০ জন। জালাল খান গ্রামের চিকিৎসক ইসরার মুঘেরি বলেন, ‘‘হিন্দুরাই মন্দিরের ভিতর থেকে মাইকের মাধ্যমে মুসলিমদের এখানে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শুধু মানুষ নন, পশুরাও আশ্রয় পেয়েছেন মন্দিরে। অনেক হিন্দু পরিবার সঙ্গে এনেছে তাদের পোষ্য গরু, ছাগল। বালুচিস্তানের ছোট্ট এই গ্রামের হিন্দু মন্দির এখন ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে মানিবকতার ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।’’