চিনা নববর্ষ উদ্যাপনে খুদেরা।—ছবি এএফপি।
জানুয়ারির গোড়া থেকেই নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে একটা উদ্বেগ ছিল। ২৫ জানুয়ারি চিনা নববর্ষের ঠিক আগে এ দেশে প্রথম করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মেলা মাত্রই একটা আতঙ্কের আবহ তৈরি হয়ে যায়। সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম বার্ষিক মানব অভিবাসন হয় এই চিনা নববর্ষের সময়েই (কুম্ভ মেলা রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে)। তাই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা এই সময় বহু গুণ বেড়ে যায়।
দুর্গাপুজোর সাথে চিনা নববর্ষ উদ্যাপনের বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। দু’টো সম্প্রদায়ের কাছেই এটা সব থেকে বড় উৎসব। দুর্গা যেমন সিংহের পিঠে চেপে অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন, সে রকমই চাইনিজ় নিউ ইয়ারে ‘লায়ন ড্যান্স’ করে অশুভ শক্তিকে তাড়ানো হয়। সিঙ্গাপুরেও প্রায় সব দফতর ও আবাসনে এই ‘লায়ন ড্যান্সের’ আয়োজন করা হয়। আমরা যেমন বিজয়ার সময়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময় করি, এখানকার মানুষজনও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। আর মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় সংক্রমণের প্রবণতা।
তাই রোগের প্রাদুর্ভাব যখন বাড়তে শুরু করল, তখন উৎসবের আমেজে একটু ভাটা পড়েছিল বটে। তবে সিঙ্গাপুর সরকার যে অদ্ভুত ক্ষিপ্রতায় পুরো ব্যাপারটা সামলেছে, তা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। বেশ কয়েকটি মন্ত্রক মিলে ২২ জানুয়ারি একটা টাস্কফোর্স তৈরি হয়েছে। এবং বেশ কিছু জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন, শহরের ঢোকার সমস্ত ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্টে শরীরের তাপমাত্রা দেখা হচ্ছে, সিঙ্গাপুরে বসবসকারী যাঁরা গত পনেরো দিনের মধ্যে চিন থেকে ফিরেছেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক আগামী পনেরো দিন বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং বাড়ি থেকেই কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চিনের হুবেই প্রদেশ (যেখানকার উহান শহরে এই সংক্রমণের উৎপত্তি) থেকে গত পনেরো দিনের মধ্যে যাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করে রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। তা ছাড়া, স্কুলে ঢোকার আগে রোজ প্রতিটি বাচ্চার তাপমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। এই ধরনের কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থার জন্যই হয় তো এ দেশে সংক্রমণের প্রকোপ বাড়তে পারেনি।
এ ধরনের অজানা অসুখে অনেক সময়েই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এখানেও হুট করে চাহিদা বেড়ে যাওয়া আর পর্যাপ্ত জোগানের অভাবে সমস্ত দোকান থেকে হঠাৎ ‘ফেস মাস্ক’ উধাও হয়ে গিয়েছিল! এই চাহিদাটা বুঝতে পেরে সরকার এই ছুটির মরসুমে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত বাসিন্দার জন্য লোকাল কমিউনিটি সেন্টার থেকে ‘ফেস মাস্ক’ বিতরণ করা শুরু করেছে।
একটা উন্নত দেশ তাদের অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামো দিয়ে এক অজানা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেটা সব থেকে প্রশংসার তা হল, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব সামলানো আর সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সেই গুজব থেকে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা। মিনিস্ট্রি অব হেলথের ওয়েবসাইট ছাড়া সিঙ্গাপুর সরকার একটা হোয়াটস্যাপ গ্রুপও চালু করেছে, যেখানে সবাই করোনাভাইরাস সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকতে পারবেন। প্রতি দিন নিয়মিত সেখানে ‘আপডেট’ দেওয়া হচ্ছে।
চিনা ক্যালেন্ডারের হিসেবে এই নতুন বছরটা হচ্ছে ‘ইয়ার অব র্যাট’। এখানে ইঁদুরকে উর্বরতা ও প্রাচুর্যের প্রতীক ভাবা হয়। এখানকার মানুষ জন মুষিকের মতোই তৎপর ভাবে করোনা-আতঙ্ক সামলে নিচ্ছেন।