হ্যাকারদের দিয়ে তথ্য চুরির অভিযোগ চিনের বিরুদ্ধে। —প্রতীকী চিত্র।
শত্রুপক্ষের নজর এড়িয়ে পাহাড়-জঙ্গলে মিশে যেতে যে ভাবে জলপাই রঙের ছাপা পোশাক ভরসা করে সেনাবাহিনী, সে ভাবেই গত এক দশক ধরে সকলের নজর এড়িয়ে বিশ্বের তাবড় শক্তিশালী দেশের কম্পিউটার থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে চিনা হ্যাকাররা। ঠিক যে সময় চিন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস নিয়ে উথাল পাথাল গোটা বিশ্ব ঠিক সেইসময় বেজিংয়ের বিরুদ্ধে এ বার এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলল কানাডার সফ্টওয়্যার সংস্থা ব্ল্যাকবেরি। চিনা সরকারের হয়েই সে দেশের হ্যাকাররা অনলাইনে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তারা।
চলতি সপ্তাহে ব্ল্যাকবেরির তরফে ৪০ পাতার একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিজ্ঞাপনের ছদ্মবেশে বিভিন্ন কম্পিউটারে আবির্ভূত হয় চিনা হ্যাকাররা। এতটাই উন্নত তাদের প্রযুক্তি, যে কম্পিউটারের ফায়ারওয়ালেও তারা ধরা পড়ে না। আর সেই সুযোগেই কম্পিউটারে মজুত রাখা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয় তারা।
২০১২-র মার্চ থেকে সরকারি মদতে চিনা হ্যাকাররা এই গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়ে আসছে বলে দাবি করেছে ব্ল্যাকবেরি। তবে সাধারণ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমগুলিতে আঘাত না হেনে, বিশ্বের তাবড় সংস্থা, সরকারি ডেটাবেস সার্ভার এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫০০ সুপারকম্পিউটারগুলিতে যে লিনাক্স অপারেটিং প্রযুক্তিতে কাজ হয়, বেছে বেছে সেগুলিতেই আঘাত হানা হয়।
আরও পড়ুন: অজানা-অনিশ্চয়তার খাদে তলিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি, শেষ কোথায় জানা নেই
ব্ল্যাকবেরির গবেষকদের দাবি, উইন্ডোজের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ বলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, গবেষণা লিনাক্সের মাধ্যমেই সুরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু সমস্যা হল, লিনাক্স একটি ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম। অর্থাৎ এই প্রযুক্তি কী ভাবে কাজ করছে, কী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এতে, তা বাইরে থেকে দেখা সম্ভব। তাই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে সহজেই চিনা হ্যাকাররা তথ্য হাতিয়ে নিতে পেরেছে।
অনলাইনে তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এই ধরনের পাঁচটি অ্যাডভান্সড পারসিসটেন্ট থ্রেট (এপিটি) সংগঠনের হদিশ পেয়েছে ব্ল্যাকবেরি। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেও ম্যালওয়্যার ছড়িয়েছে তারা। বলা হয়েছে, শুরুতে বিভিন্ন ভিডিয়ো গেম সংস্থার থেকে চুরি করা সার্টিফিকেট নিয়ে ম্যালওয়্যার ছড়ানো হতো, র্বতমানে অ্যাডওয়্যার ভেন্ডরদের সার্টিফিকেট চুরি করে ম্যালওয়্যার ছড়ানো হচ্ছে। ম্যালওয়্যার ছড়ানো হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসগুলিতেও।
এই পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে চিনা সরকারের যোগসাজশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে বলেও জানিয়েছে ব্ল্যাকবেরি। তবে চিন সরকার যে এই যোগসাজশের কথা কখনওই স্বীকার করবে না, সে ব্যাপারেও নিশ্চিত তারা। তাদের দাবি, সরাসরি নিজেদের লোক লাগিয়ে এই কাজ করায়নি চিনা সরকার। বরং বেশ কিছু কন্ট্র্যাক্টরকে বরাত দিয়ে গোটা অপারেশনটি চালানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার ছুঁইছুঁই, ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও ৩৩
তবে তিন সরকারের মদতে নিভৃতে হ্যাকাররা নিভৃতে এই ধরনের ঘটনা যে ঘটিয়ে চলেছে, এ বছর ফেব্রুয়ারিতেই তার ইঙ্গিত দেয় মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। ওয়াশিংটনে ‘চায়না ইনিশিয়েটিভ কনফারেন্স’ চলাকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল পি বার জানান, গবেষণার নামে কমবয়সী পড়ুয়াদের নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সাইবার অনুপ্রবেশ চালাচ্ছে চিন সরকার। এর আগে, ২০১৮-র নভেম্বরে চিনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তোলেন অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস। সেইসময় তিনি বলেন, ‘‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে বছরের পর পরিশ্রম করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে সমস্ত আবিষ্কার করেছে, মুহূর্তের মধ্যে তা চুরি করে নিতে সক্ষম হ্যাকাররা।’’