নিউ ইয়র্কে ঢোকার মুখে নৌকায় গ্রেটা। ছবি: টুইটার
পনেরো দিনের জলপথের পাড়ি শেষ করে নিউ ইয়র্কে পৌঁছল জলবায়ু নিয়ে আন্দোলনকারী সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ। আগামী মাসে সে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি সম্মেলনে যোগ দেবে। সুইডেন থেকে বিমানে নিউ ইয়র্ক পৌঁছনো অনেক সহজ হলেও সে পথে যায়নি গ্রেটা। যাত্রাপথে এতটুকু কার্বন-দূষণ যাতে না হয়, সে জন্য পরিবেশ সচেতন কিশোরী বেছে নিয়েছিল পাল তোলা বড় নৌকা। সৌর প্যানেল থেকে সৌর বিদ্যুৎ নিয়ে এবং জলের নীচে টারবাইন ঘুরিয়ে জলবিদ্যুতের শক্তিতে ওই জলযানকে চালানো হয়।
আজ অতলান্তিক পেরিয়ে যখন ১৬ বছরের এই কন্যার নৌকা ব্রুকলিনের কোনি দ্বীপে পৌঁছয়, তখন সেখানে সাংবাদিক আর শুভাকাঙ্ক্ষীর ভিড়। সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের পথ পেরিয়ে আসা কিশোরীকে ঘিরে ছবি তোলার ধুম। সকলেই চিৎকার করে স্বাগত জানিয়েছেন গ্রেটাকে। পৌঁছনোর আগে বুধবারই গ্রেটা নিজে একটি দূরের আলো-মাখা ঝাপসা ছবি টুইটারে পোস্ট করে লিখেছে, ‘‘ল্যান্ড!!! দ্বীপের আলো, আর অদূরেই নিউ ইয়র্ক সিটি।’’
তীরে পৌঁছনোর কিছুটা আগে থেকেই তার নৌকার পাশে হাজির হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের ১৭টি ছোট নৌকার ঝাঁক। কার্বন-দূষণ পুরোপুরি কমাতে যে কিশোরী এত উদগ্রীব, তার মার্কিন মুলুকে পা রাখার খবরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রেসিডেন্ট অবশ্য তাঁর অবস্থানের জন্য অনেক দিন আগেই সমালোচিত হয়েছেন গোটা বিশ্বে। গ্রেটা এ বার তাঁর দেশে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দিতে এসেছে, তাই সকলেরই আগ্রহ তুঙ্গে। কোনি দ্বীপ থেকে অভিবাসন সংক্রান্ত প্রক্রিয়া পেরিয়ে গ্রেটার পৌঁছনোর কথা ম্যানহাটনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কাছে নর্থ কোভ মেরিনায়। গত ১৪ অগস্ট দক্ষিণ ইংল্যান্ডের প্লাইমাউথ থেকে ছেড়েছিল গ্রেটার নৌকা।
১২ বছর বয়সে অ্যাসপারগার সিনড্রোম (সামাজিক ভাবে যোগাযোগ স্থাপনে অসুবিধা) ধরা পড়েছিল এই কিশোরীর। ২০১৮ সালের অগস্ট থেকে তার আন্দোলন জোরদার হয়। প্রথমে স্কুলে এবং তার পর সুইডিশ পার্লামেন্টের বাইরে বসে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বার্তা দেওয়া শুরু করে সে। সারা বিশ্বের পড়ুয়াকে পাশে পেয়ে জোরদার হয় তার আন্দোলন। শুরু হয় ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’। ২০১৮-র ২০ অগস্ট স্কুল থেকে যে পথ চলার শুরু, তার এক বছর পার করে নৌকা থেকেই বার্তা দিয়েছে গ্রেটা।
তবে এ ভাবে নিউ ইয়র্কে আসার জন্য গ্রেটার সমালোচনাও হয়েছে বিস্তর। কেন সে জেদ ধরে বসে আছে, নৌকা করেই আসবে, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন কেউ কেউ। অনেকের দাবি, গ্রেটার ওই নৌকা ইউরোপে ফেরাতে আবার বেশ কয়েক জনকে উড়ে যেতে হবে নিউ ইয়র্কে। গ্রেটা অবশ্য জানায়নি সে কী ভাবে ফিরবে। ২৩ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের শীর্ষ সম্মেলন শুরু। সেটা সেরে ডিসেম্বরে আরও একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা তার। মাঝে কানাডা, মেক্সিকো এবং চিলেতে গিয়ে সে পরিবেশ নিয়ে একাধিক কর্মসূচিতেও যোগ দেবে।