পরমাণু শক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার খবরে জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তে আনন্দ-অনুষ্ঠান হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
গোটা বিশ্ব জুড়ে যখন পরমাণু শক্তির হুঙ্কার ও বলপ্রদর্শন, তখন পরমাণু শক্তি উৎপাদন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিল জার্মানি। এ দেশে চালু থাকা শেষ তিনটি পরমাণু চুল্লি গত কাল থেকে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে তীব্র জ্বালানি-সঙ্কটে রয়েছে জার্মানি-সহ গোটা ইউরোপ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও ধীরে ধীরে বন্ধ করে দিচ্ছে তারা। এই অবস্থাতেও পরমাণু শক্তির ব্যবহার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল এই দেশ। খুশি জার্মানির মানুষ।
পশ্চিমের দেশগুলি কিন্তু পরমাণু শক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। সেখানে জার্মানির পরমাণু-যুগ শেষ হয়ে গেল এত তাড়াতাড়ি। গত কাল রাতে তিনটি পরমাণু চুল্লি বিদ্যুত গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে এই কথা জানিয়েছে আরডব্লিউই শক্তি সংস্থা।
২০০২ সাল থেকে পরমাণু শক্তির ব্যবহার বন্ধের কথা ভাবতে শুরু করেছিল ইউরোপের অন্যতম বহৎ এই অর্থনীতি। ২০১১ সালে জাপানে ফুকুশিমা-দাইচি পরমাণু বিপর্যয়ের পরে বিষয়টি সম্পর্কে আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই মতো পদক্ষেপ করতে শুরু করেছিলেন তৎকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। অবশেষে ২০২৩ সালে সম্পূর্ণ বন্ধ হল। ২০২২ সালেই বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধের জেরে রুশ গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তাতে পিছিয়ে যায় গোটা প্রক্রিয়াটি।
জার্মানির মানুষ এই সিদ্ধান্তে যারপরনাই খুশি। ঠান্ডা যুদ্ধ কিংবা ইউক্রেনের চের্নোবিল বিপর্যয়ের কথা মাথায় রেখে তাঁরা বরাবরই পরমাণু শক্তি-বিরোধী। পরিবেশ মন্ত্রী স্টেফি লেমকে বলেন, ‘‘পরমাণু শক্তির ঝুঁকি কোনও ভাবেই সামলানো সম্ভব নয়।’’
পরমাণু শক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার খবরে জার্মানির বিভিন্ন প্রান্তে আজ আনন্দ-অনুষ্ঠান হয়েছে। পরমাণু শক্তি-বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রে থাকা ‘গ্রিনপিস’ সংস্থা বার্লিনের ব্র্যান্ডেনবার্গ গেট-এ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেখানে একটি প্রতীকী ডাইনোসরের মডেল ধ্বংস করা হয়। এ ছাড়াও জার্মানির বেশ কয়েকটি শহরে আজ মিছিল করেন সাধারণ মানুষ, উদ্যাপন করা হয় দিনটি। অনেকেই বলেন, ‘‘এক বিপজ্জনক, অস্থিতিশীল, দামী প্রযুক্তির ব্যবহার অবেশেষ বন্ধ হল।’’
অর্থনীতি মন্ত্রী রবার্ট হাবেক জানিয়েছেন, এখন, না হলে পরে ওই চুল্লিগুলি নষ্ট করে দেওয়া হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গ্যাস স্টোরগুলিতে জ্বালানি মজুত আছে। রুশ জ্বালানি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় যে পরিস্থিতি হয়েছিল, সেটা সামলানো গিয়েছে। তবে সরকার জানিয়েছে, তারা একটি লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। জার্মানি পরমাণু শক্তির পাশাপাশি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারও বন্ধের চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় তারা ঠিক করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় জ্বালানির ৮০ শতাংশ তারা পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি হিসেবে উৎপাদন করবে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি যেমন, হাওয়াকল। গত এক বছরে ৫৫১টি উইন্ড টারবাইন বসানো হয়েছে। আগামী বছরগুলিতে এই প্রক্রিয়া জারি থাকবে।