‘আমাদের শ্বাস নিতে দাও’। পোস্টার হাতে ড্যালাস পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভকারীরা। এপি
মিনিয়াপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক খুনের ঘটনায় আজও উত্তাল আমেরিকা। ‘আমার দম আটকে আসছে’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভকারীদের দেখা গেল করোনায় লকডাউন হোয়াইট হাউসের বাইরেও। কার্ফু ভেঙেই নিউ ইয়র্ক, আটলান্টা, লাস ভেগাসের রাস্তায় রাস্তায় চলল দেদার ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা। নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সমবেদনা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে ‘থার্ড ডিগ্রি’ খুনের মামলা দায়েরও হয়েছে। করোনা-বিধি শিকেয় তুলে বিক্ষোভ তবু চলছেই।
‘আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে, আর পারছি না। মরে যাচ্ছি আমি’— সোমবার ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে এ ভাবেই কাতরাতে দেখা গিয়েছিল জালিয়াতির দায়ে ধৃত বছর ছেচল্লিশের কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে। তাঁর গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে রাখা শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনের আক্রোশ তবু মেটেনি। প্রায় মিনিট পাঁচেক পরে শ্বাসরোধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ যায় জর্জের। মোবাইল ফুটেজ সামনে আসার পর-পরই ওই ঘটনায় জড়িত চার পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়। তবু প্রতিবাদের আগুন নেভেনি।
পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে গত দু’দিন লাগাতার পথে নামছেন বিক্ষোভকারীরা। শহরে-শহরে চলে দোকান ভাঙচুর, পুলিশের গাড়িতে আগুন, এমনকি থানা ভাঙচুরও। গত কাল নিউ ইয়র্কের বার্কলেস সেন্টারে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও ঢুকে পড়ে বিক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশি অত্যাচার নিয়ে সশস্ত্র পুলিশের সঙ্গেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। ঘটনাস্থল নিউ ইয়র্ক। কোথাও আবার প্রতিবাদী মিছিলে একাকার হয়ে দেল হিপ-হপও। ব্রুকলিনে রাস্তায় দেখা গেল, সার দিয়ে দাঁড় করানো বাসে ধৃত কয়েকশো বিক্ষোভকারীকে পর-পর তুলছে পুলিশ।
একাংশের অভিযোগ, পরিস্থিতি আজ এতখানি অগ্নিগর্ভ প্রেসিডেন্টের কারণেই। কার্যত জনতাকে দুষেই ট্রাম্পকে সম্প্রতি বলতে শোনা যায়, ‘লুটপাট চললে শুটিং তো হবেই’! ‘হিংসাকে প্রশ্রয়’ দেওয়ার অভিযোগে গত কালই ট্রাম্পের একটি টুইট হাইড করেছিল টুইটার। আজ অবশ্য পরিস্থিতি আঁচ করে খানিকটা সুর নরম করেই প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘নিহত কৃষ্ণাঙ্গ যুবকের পরিবারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওঁরা সবাই খুব ভাল মানুষ।’’ তবে এ নিয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের নামে লাগাতার চলতে থাকা বিশৃঙ্খলা যে তিনি সহ্য করবেন না, তা-ও জানান ট্রাম্প। বর্ণবিদ্বেষী পুলিশের অত্যাচার নিয়ে সরব হলেও আটলান্টা-সহ গোটা দেশের প্রতিবাদীদের অহিংস পথে থাকারই আর্জি জানিয়েছেন প্রবাদপ্রতিম মানবাধিকারকর্মী মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের কনিষ্ঠ কন্যা বার্নিস কিং। আটলান্টাতেই বেশ কিছু গাড়িতে আগুন ধরিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। যার মধ্যে অন্তত একটি গাড়ি পুলিশের বলে খবর।