অভিনন্দন বর্তমান— ফাইল চিত্র।
সৌজন্যের বার্তা দিতে নয়, ভারতের প্রত্যাঘাতের ভয়েই উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়েছিল ইমরান খানের সরকার। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে বক্তৃতায় বুধবার এমনই অভিযোগ করেছেন বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন)-এর সদস্য আয়াজ সাদিক।
পাশাপাশি তাঁর দাবি, বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি সে দিন ভারতের ‘সম্ভাব্য হামলা’র খবর জানিয়ে অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বক্তৃতায় সাদিক বলেন, ‘‘ভারতের হামলার ভয়ে সে দিন পাক সেনাপ্রধান কমর জাভেদ বাজওয়ার পা কাঁপছিল।’’
২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহরের অদূরে জঙ্গি শিবিরে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। জবাবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হামলা চালায় পাক বায়ুসেনা। সে সময় হামলাকারী এফ-১৬ বিমানের পিছু ধাওয়া করেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। নিজের মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশসীমা পেরিয়ে ঢুকে পড়েন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। এর পরে আহত অবস্থায় পাক সেনার হাতে বন্দি হন তিনি। রক্তাক্ত অভিনন্দনের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিয়ো সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে পাক সেনা। প্রায় ৬০ ঘণ্টার টানাপড়েনের পর ১ মার্চ অভিনন্দনকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। ওয়াঘা সীমান্তে তাঁকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রাক্তন স্পিকার সাদিক জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখায় আকাশ-যুদ্ধের পরে ভারতীয় বায়ুসেনার অফিসার অভিনন্দনের বন্দি হওয়ার খবর আসার পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পার্লামেন্টের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন কুরেশি। বৈঠকে ছিলেন জেনারেল বাজওয়া। প্রথমে ঠিক ছিল, প্রধানমন্ত্রী ইমরান বৈঠকে আসবেন। কিন্তু তিনি বৈঠক এড়িয়ে যান।
আরও পড়ুন: জঙ্গি-অর্থের উৎস সন্ধানে ফের অভিযানে এনআইএ, দিল্লিতে হানা
সাদিক বলেন, ‘‘আমি সেদিন বৈঠকে ছিলাম। স্পষ্ট মনে আছে সেনাপ্রধান বাজওয়া যখন বৈঠকে ঢুকলেন, তাঁর পা কাঁপছিল। তিনি ঘামছিলেন। কুরেশি বলেন, ‘ঈশ্বরের দোহাই অভিনন্দনকে যেতে দাও। ওঁকে না ছাড়লে আজ রাত ৯টায় ভারতীয় সেনা আমাদের আক্রমণ করবে’।’’ প্রসঙ্গত, অভিনন্দনের মুক্তির পরে ইমরান দাবি করেছিলেন প্রতিবেশীকে সৌজন্যের বার্তা দিতেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ভারতীয় বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান বি এস ধানোয়া বৃহস্পতিবার সাদিকের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে বলেন, ‘‘অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়া ছাড়া পাকিস্তানের আর কোনও পথ ছিল না।’’ সে সময় ভারতীয় ফৌজ স্থল, জল এবং আকাশে পাকিস্তানের উপর হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছিল বলে জানান তিনি। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় বন্দি ভারতীয় যুদ্ধবিমান চালক অজয় আহুজাকে খুন করেছিল পাক সেনা। অভিনন্দনের বাবার প্রাক্তন সহকর্মী ধানোয়ার মন্তব্য, ‘‘অভিনন্দনের ধরা পড়ার ঘটনা জেনে আমি স্যরকে (অভিনন্দনের বাবা) বলেছিলাম, ‘অজয়কে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। কিন্তু অভিনন্দনকে ফিরিয়ে আনবই’।’’
আরও পড়ুন: ইসলামভীতি নিয়ে ইমরানের আর্জি
সে দিন কুরেশি যখন অভিননন্দনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তখন বিরোধীরা তা সমর্থন করেছিলেন বলে সাদিকের দাবি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধীরা পাক সরকার ও সেনাপ্রধানকে কোনও অবস্থাতেই সহযোগিতা করবে না বলে জানিয়ে দেন তিনি। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী ইমরানের ইস্তফার দাবিতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান জুড়ে আন্দোলনে নেমেছে পিএমএল (এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-সহ ১১টি বিরোধী দলের জোট। প্রধানমন্ত্রীর অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপকে জেনারেল বাজওয়া মদত দিচ্ছেন বলেও তাদের অভিযোগ।