গাজ়ার শরণার্থী শিবির। —ছবি: সংগৃহীত।
মঙ্গলবার গাজ়ার শরণার্থী শিবিরে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র হানা। পর পর বিস্ফোরণের ফলে উত্তর গাজ়ার সবচেয়ে বড় জাবালিয়া শরণার্থী শিবির নিমেষের মধ্যে শ্মশানে পরিণত হল। ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্সের দাবি, ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েল হামলার সঙ্গে যুক্ত ইব্রাহিম বিয়ারি নামে হামাসের এক উচ্চপদস্থ কম্যান্ডারকে হত্যার উদ্দেশেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে শরণার্থী শিবিরে হামলা করা হয়। হামাস চালিত গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৫০ জন মারা গিয়েছেন। ১৫০ জন আহত হয়েছেন বলেও জানা গিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার হঠাৎ সাত থেকে আটটি ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়ে শরণার্থী শিবিরে। এর ফলে উপস্থিত শরণার্থীদের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
মহম্মদ ইব্রাহিম নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী সিএনএনকে বলেন, ‘‘আমি পাউরুটি কিনব বলে অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ দেখি কোনও রকম সতর্কতা ছাড়াই সাত-আটটি ক্ষেপণাস্ত্র শিবিরে এসে পড়ল। আমার পরিবারের সদস্যরা ওই শিবিরেই ছিল। ভয় পেয়ে আমি ছুটে যাই। কিন্তু সেখানে পৌঁছে যা দেখলাম, তা ভয়াবহ। সবই ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। চারদিকে মৃতদেহ ছড়িয়ে রয়েছে। ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল চতুর্দিকে। খালি চোখে কিছুই তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। কানে ভেসে আসছিল চিৎকার, কান্নার শব্দ।’’
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইব্রাহিম বলেন, ‘‘শিবিরে যত জন বাচ্চা ছিল, তারা খেলাধুলার জন্য এ দিক-ও দিক ছড়িয়েছিল। তার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। বাচ্চাদের মায়েরা হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের সন্তানের জন্য শোকপালন করবেন, নাকি তাদের খোঁজ করবেন— তার কিছুই ঠাহর করতে পারছিলেন না।’’
ইব্রাহিমের সংযোজন, ‘‘শিবিরে পৌঁছে আমি এমন দৃশ্যও দেখেছি যে, শিশুরা অন্য আহত শিশুদের কোলে করে ছুটে যাচ্ছে। প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে চোখেমুখে ভয় নিয়ে ছুটছে সকলে।’’ বিস্ফোরণের ফলে শিবিরের কয়েকটি জায়গায় মাটিতে একাধিক গর্ত তৈরি হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স সূত্রে খবর, উত্তর গাজ়ায় মঙ্গলবার অভিযান চালানো হয়। যুদ্ধবিরতি করা হবে না, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এ কথা ঘোষণা করার পরই হামলা আরও জোরদার করা হয় উত্তর গাজ়ায়। মঙ্গলবারেও হামাসের বেশ কয়েকটি ডেরা ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি আইডিএফের। এই অভিযানে হামাস নির্মিত বেশ কয়েকটি সুড়ঙ্গে হামলা চালিয়ে যুদ্ধবন্দি এক ইজ়রায়েলি সেনাকেও উদ্ধার করা হয়েছে।
গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ৭ অক্টোবর থেকে এখনও পর্যন্ত গাজ়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৮ হাজার ৫২৫ জন। নিহতদের মধ্যে শিশু-কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা অন্তত ৩ হাজার ৫৪২ জন। সোমবার পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৩০৬ জন। অর্থাৎ, এক দিনে ২০০ জনের বেশি প্রাণ হারিয়েছেন ইজ়রায়েলের হামলায়। তার পাশাপাশি ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে মৃত্যু হয়েছে দুই প্যালেস্তিনীয়ের। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ১২১ জন প্যালেস্তিনীয় প্রাণ হারিয়েছেন।