ফাইল চিত্র।
টিকাকরণ চলছে, তবে ধীর গতিতে। এ দিকে, সংক্রমণের গতি মাত্রাছাড়া। ইউরোপের এই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। দুশ্চিন্তায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ও। তাদের অভিযোগ, ফাইজ়ারের টিকার আকাল। আর অক্সফোর্ডের টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়। এ অবস্থায় ইউরোপের ‘চরম শত্রু’ বলে পরিচিত রাশিয়ার দিকে মিত্রতার হাত বাড়াতে চাইছে ইইউ সদস্য দেশগুলি, যা মস্কোর কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
এ সপ্তাহে একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন। তাতে দেখা গিয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে। ক্রেমলিনের দাবি, ওই বৈঠকে রুশ প্রতিষেধক স্পুটনিক ভি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রুশ প্রতিষেধকটি কেনার বিষয়ে নাম নথিভুক্ত করতে চায় ইইউ। স্পুটনিক ভি আমদানির পাশাপাশি প্রতিষেধকটি উৎপাদনেও অংশ নিতে চায় তারা। তবে জার্মান বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়েছে, তাদের শর্ত মেনে নিয়ে যাবতীয় গুণমানের মানদণ্ড পূরণ করলে, তবেই স্পুটনিক ভি ব্যবহার করা হবে।
জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে এই বৈঠকের বহু আগে থেকেই ইউরোপের কিছু দেশ নিজেদের মতো করে যোগাযোগ করেছিল রাশিয়ার সঙ্গে। পুতিনের কাছে সাহায্যও চেয়েছিল। এ বার সরাসরি ব্লকের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হল। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে হাত মেলানো নিয়ে ইউরোপের মিত্র দেশগুলি ক্ষুব্ধ। ইইউ-এর সদস্য দেশগুলির মধ্যেও অনেকে ভাল চোখে দেখছে না বিষয়টিকে। তাদের আশঙ্কা, সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোতে পারে মস্কো। মহাদেশের মধ্যে টিকা নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি খেলতে পারে তারা। প্রাক্তন সোভিয়েত অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনও ভাবেই রুশ প্রতিষেধক ব্যবহার করার পক্ষপাতী নয়। তবে ইইউ-এর ২৭টি সদস্য দেশের মধ্যে বেশির ভাগই বিষয়টি নিয়ে সদর্থক মনোভাব দেখিয়েছে।
গত বছরের গ্রীষ্মে রাশিয়া যখন দেশজ প্রতিষেধকটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োগ শুরু করে দেয়, তখন প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ক্রেমলিন। রুশ প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন, তাঁর মেয়েকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। এই দাবির সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। অসম্পূর্ণ ট্রায়াল রিপোর্টের ভিত্তিতে টিকাকরণ শুরু বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে জানিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বর্তমানে ছবিটা অন্য রকম। সম্প্রতি জার্নাল ‘ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত হয়েছে স্পুটনিক-ভি-র ট্রায়াল রিপোর্ট। তাতে দাবি করা হয়েছে, প্রতিষেধকটি ভীষণই কার্যকরী ও নিরাপদ। খুব শীঘ্রই ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি’ (ইইউ-এর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা) স্পুটনিক ভি-কে আনুষ্ঠানিক ছাড়পত্র দিয়ে দেবে বলে শোনা যাচ্ছে।