আমরুল্লা সালেহ্র নেতৃত্বে ফের তালিবান বিরোধী লড়াই শুরু। ছবি: সংগৃহীত।
আফগানিস্তানের ৯৫ শতাংশ এলাকা ইতিমধ্যেই দখল করেছে তালিবান। কিন্তু এখনও দেশের উত্তরাংশের কিছু এলাকায় চলছে প্রতিরোধ। বুধবার মধ্য-উত্তরাংশের পারওয়ান প্রদেশের রাজধানী চারিকার-সহ তালিবানের দখল করা কিছু অঞ্চল বিরোধীরা ছিনিয়ে নিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তালিবান বিরোধী সেই প্রতিরোধের নেতৃত্বে রয়েছেন সদ্য-প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির ‘ডেপুটি’ আমরুল্লা সালেহ্।
উত্তর-মধ্য আফগানিস্তানের এই এলাকা দিয়েই কাবুল থেকে মাজার-শরিফের পথ গিয়েছে। বিরোধী জোটের এই প্রত্যাঘাতের ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলে তালিবানের অবস্থান কিছুটা নড়বড়ে হয়ে গেল বলেই সামরিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী তাজিক সম্প্রদায়ের নেতা সালেহ্ মঙ্গলবারই টুইটারে জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট গনির অনুপস্থিতিতে তিনিই নির্বাচিত আফগান সরকারের নেতৃত্ব দেবেন। ইতিমধ্যেই সালেহ্র সঙ্গে পঞ্জশির প্রদেশের প্রভাবশালী তাজিক নেতা আহমেদ মাসুদ হাত মিলিয়েছেন বলে খবর।
প্রসঙ্গত, আহমেদের বাবা আহমেদ শাহ মাসুদ দু’দশক আগে তালিবান বিরোধী ‘উত্তরের জোট’ (নর্দার্ন অ্যালায়্যান্স)-এর নেতা ছিলেন। ২০০১-এ সাংবাদিকের ছদ্মবেশে আল কায়দার মানববোমা হামলায় তিনি নিহত হন। আহমেদের বাহিনী এ বারও উত্তর-মধ্য আফগানিস্তানে তালিবানকে শক্ত প্রতিরোধের মুখে ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট গনি ছিলেন সংখ্যাগুরু পাশতুন গোষ্ঠীর নেতা (তালিবান বাহিনীও এই জনগোষ্ঠীর যোদ্ধাদের নিয়েই তৈরি)। তাঁর সরকারে তিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনীত হয়েছিলেন দেশের অন্য তিন প্রভাবশালী জনগোষ্ঠী থেকে। সালেহ্ ছাড়া সেই তালিকায় ছিলেন উজবেক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রশিদ দোস্তম এবং হাজরা উপজাতির নেতা সারওয়ার দানিশ।
আদতে জৌঝান প্রদেশের ‘যুদ্ধপতি’ (ওয়ার লর্ড) দোস্তম একদা নাজিবুল্লা সরকারের সেনা আধিকারিক ছিলেন। পরবর্তীকালে আহমেদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বাধীন তালিবান বিরোধী জোটেরও অন্যতম নেতা হন তিনি। সূত্রের খবর, কাবুলের পতনের পরে উজবেকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে রয়েছেন বল্খ প্রদেশের প্রাক্তন গভর্নর তথা তালিবান বিরোধী তাজিক মিলিশিয়ার নেতা আট্টা মহম্মদ নুর।
ইতিমধ্যেই তাঁদের বাহিনীর সঙ্গে সালেহ্র ‘যোগাযোগ’ তৈরি হয়েছে বলেও তালিবান বিরোধী জোট সূত্রের খবর। এ ছাড়া উত্তরের আরেক প্রদেশ বদখ্শনেও এখনও তালিবানের আধিপত্য নিরঙ্কুশ হয়নি। একদা উত্তরের জোটের অন্যতম ওই ঘাঁটিতেও প্রতিরোধের প্রস্তুতি চলছে বলে খবর। কাবুল-সহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা তালিবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ার পর তাজিক, উজবেক, হাজারা, তুর্ক সম্প্রদায়ের বহু আফগান সেনা পালিয়ে গিয়েছেন উত্তরাঞ্চলে। তালিব যোদ্ধাদের মোকাবিলায় তাঁদের একাংশকেও পাশে পেয়েছেন সালেহ্।