আফগান সেনাকে দেওয়া আমেরিকার ড্রোন এখন তালিবানের দখলে। ছবি: সংগৃহীত।
মাস তিনেক আগে আমেরিকার সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর আফগানিস্তানের নানা প্রান্তে সক্রিয়তা বেড়েছিল তালিবানের। সেই অভিযানের গোড়ার দিকে তাদের অস্ত্রসম্ভারে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল আর গ্রেনেড লঞ্চারের (আরপিজি)-র পাশাপাশি সোভিয়েত জমানার হাল্কা ও মাঝারি মেশিনগানের উপস্থিতির কথা জানা গিয়েছিল।
ছবিটা এক সপ্তাহে বদলে গিয়েছে অনেকটাই। আফগান সেনার বিপুল অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম চলে এসেছে তালিবান যোদ্ধাদের হাতে। এসেছে আমেরিকা-সহ ন্যাটো ফৌজের ব্যবহৃত নানা সমর উপকরণও। ট্যাঙ্ক, কামান, মাল্টি ব্যারেল রকেট লঞ্চার ভারি মেশিনগানের পাশাপাশি সেই তালিকায় রয়েছে হেলিকপ্টার এমনকি, অত্যাধুনিক পাঁচটি ‘স্ক্যান ঈগল ড্রোন’। কুন্দুজ বিমানঘাঁটি থেকে দখল করা ওই ড্রোনগুলি বহুদূর জুড়ে নজরদারি চালাতে সক্ষম।
কাবুল দখলের পরেই আফগান সেনাকে খয়রাতিতে দেওয়া আমেরিকান এম-২৪ স্নাইপার রাইফেল, এম-৪ কার্বাইন এবং এম-২৪০ হাল্কা মেশিনগান নিয়ে দেখা গিয়েছে তালিবান বাহিনীকে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, আফগান সেনাকে দেওয়া এম-২ ব্রাউনিং ভারী মেশিনগান এমনকি, অত্যাধুনিক ছ’নলা এম-১৩৪ মিনিগানও পেয়ে গিয়েছে তালিবান। এই সব হাল্কা এবং মাঝারি অস্ত্রের অনেকগুলিই পাক সেনাও ব্যবহার করে। ফলে ভবিষ্যতে ‘রসদ’ পেতে অসুবিধা হবে না তালিব-বাহিনীর। বস্তুত, আফগান সেনার থেকে দখল করা আমেরিকান ‘হাম্ভি’ সামরিক যানে বসানো ব্রাউনিং মেশিনগান এখন তালিবানের অন্যতম অস্ত্র।
সেনার যানে তালিবান টহল।
সাম্প্রতিক গৃহযুদ্ধে আফগান সেনার ব্যবহূত আমেরিকান এম-১১৩ ‘আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার’ বা এম-১১১৭ ‘ইন্টারন্যাল সিকিউরিটি ভেহিকল’-এর বড় অংশও এখন তালিবানের দখলে। পাশাপাশি, ন্যাটো বাহিনীর ন্যাভিস্টার মিলিটারি ট্রাক এবং ফোর্ড রেঞ্জার গাড়িতেও সওয়ার হতে দেখা যাচ্ছে তাদের।
আমেরিকার সেনার পুরনো গোটা চব্বিশেক এম-১১৪ কামান আফগান আর্টিলারি ব্রিগেডগুলি ব্যবহার করত। তার একাংশ এখন হিবাতুল্লা আখুন্দজাদার দখলে। সেই সঙ্গে পুরনো সোভিয়েত জমানার ট্যাঙ্ক-বহরও।
তবে পলাতক আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনির অনুগত বিমানবাহিনীর পাইলটেরা যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারের বড় অংশই উজবেকিস্তান-সহ অন্য কয়েকটি দেশে সরাতে পেরেছে বলে খবর। শেষ বেলায় কন্দহর এবং বাগরাম বায়ুসেনাঘাঁটি থেকে আমেরিকার বাহিনীরও তাদের বিমান-সহ বেশ কিছু সামরিক উপকরণ সরিয়ে নেয়। তবে ভারতীয় বায়ুসেনার দেওয়া একটি এম-২৪ যুদ্ধ হেলিকপ্টার দখল করেছে তারা।
আমেরিকার নেটাগরিকদের একাংশ ইতিমধ্যেই তালিবানের এই অস্ত্র দখল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সেই সঙ্গে উঠে এসেছে অন্য একটি চিন্তার প্রসঙ্গও— তালিবানের সাহায্যে ‘স্ক্যান ঈগল’-এর মতো অধ্যাধুনিক ড্রোন হাতে পেলে দ্রুত তার নকল বানিয়ে ফেলতে পারে চিন।